মার্বেল

মার্বেল-কাঠিন্যের আড়ালে কোমলতা

মার্বেল -কাঠিন্যের আড়ালে কোমলতা

মার্বেল –কাঠিন্যের আড়ালে কোমলতা। আপাতদৃষ্টিতে পাথর কাঠিন্য ও দৃঢ়তার প্রতীক । পাথর বলতেই আমাদের মনে জাগে নিরস , কঠিন কোন রূপ । মানুষ আবেগবর্জিত বা নির্বিকার হলে আমরা বলি পাথর হয়ে যাওয়া । নিরস এমনই সব অনুভূতির এসব উপমার অধিকারী পাথরের কাঠিন্যের রূপ নয় বরং এর সৌন্দর্য্যই আমাদের এবারের বিষয় ।

নিরস , নিথর পাথরই যে প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক অবস্থান ও গঠনের প্রেক্ষাপটে কতটা দিপ্তীময় , ঝলমলে রূপ লাভ করে তা আসলেই অভূতপূর্ব । মার্বেল , গ্রানাইট , বেলেপাথর প্রভৃতির সৌন্দর্য্য আমদের সবারই জানা । ভবনের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শোভাবর্ধনের ও আভিজাত্যের প্রকাশে এসব উপকরণের ব্যবহার অনস্বীকার্য ।

মার্বেল এক প্রকার রূপান্তরিত চুনাপাথর যা সর্বতোভাবে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ( CaCO3 ) দিয়ে গঠিত । মার্বেল শব্দটি এসেছে গ্রীক “মার্মারোস’’ থেকে যার অর্থ চকচকে পাথর । এ পাথরের কোমলতা এবং এর আপেক্ষিক isotropic এবং এর উপাদানের সমজাতীয়তার ( homogeneity ) কারণে ভাষ্কর্য ও দালানের সজ্জায় এর ব্যবহার গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে । যদিও মার্বেল চুনাপাথরের একটি রূপ তবুও মার্বেল গঠনের প্রয়োজনীয় তাপ ও চাপ এর ভেতরে কোন ফসিলের অস্তিত্বকে বিনাশ করে যা সাধারণ চুনাপাথরে পাওয়া যায় ।

মার্বেল মুলতঃ চীন, মিশর, গ্রীস, ভারত, ইরান, ইতালী, স্পেন, তুরস্ক প্রভৃতি স্থান থেকে উৎপত্তি হয়। তবে আমাদের দেশে সাধারণত : ইতালী, স্পেন ও ভারতের মার্বেল সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায়।

মার্বেল এর প্রকারভেদ

মার্বেলের অসংখ্য বৈচিত্রের ভিড়ে একে মূলত: তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

  1. কারারা (ইতালি)
  2. পেন্টেলিকাস (গ্রীস)
  3. প্রোকোনেসাস (তুরস্ক)

মার্বেলের রং, বৈচিত্র ও বুনট ( Texture )- এর ভান্ডার বিশাল । এর রূপ বৈচিত্র সত্যিই মোহিত করার মত । প্রকৃতি নিজ হাতে বিভিন্ন রং , বুনট ও নকশার মাধ্যমে এর রূপ সৃষ্টি করেছে । কোনটা সাদায় আভিজাত্যের প্রতীক, কোনটা বিদ্যুৎ রেখার ভঙ্গিমায় চাঞ্চলতার রূপক, কোনটা আবার বিগলিত মহিমার প্রকাশ ঘটায় । কোনটা যেন সমুদ্রের বালুকাবেলা, কোনটা আবার রাতের আকাশে বিদ্যুতের ঝিলিক । তবে মানের দিক থেকে ইতালী ও স্পেনের মার্বেলই সবচেয়ে ভাল । অঞ্চলভেদে এসব ডিজাইনের বিভিন্ন নাম হয়ে থাকে । প্রাকৃতিকভাবে গঠিত বলে একই নামের মার্বেল একদম একই ডিজাইনের নাও পাওয়া যেতে পারে ।

ইউরোপীয় মার্বেল সাধারণত ভারতীয় মার্বেলের তুলনায় আকারে বড় হয় । মার্বেলের উজ্জ্বলতার দিক থেকেও ইতালীর মার্বেল সেরা । তাই স্বভাবতই এর সমাদর বেশি এবং এগুলো দামেও অপেক্ষাকৃত মূল্যবান । মার্বেল সাধারণত সর্বনিম্ন ১/২ ইঞ্চি পুরুত্বের হতে পারে । যেহেতু এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান তাই নির্দিষ্ট মাপের এবং বিশাল আকারে একে পাওয়া না’ও যেতে পারে । বড় আকারের মার্বেলের মধ্যে গোলাপী ধূসর নকশার মার্বেল পাওয়া যেতে পারে যা ৩’x৭ ‘ হতে পারে । সাদা কারারা মার্বেলও একই আকারের পাওয়া যেতে পারে । তবে এসবই নির্ভর করে বাজারে প্রয়োজনীয় মার্বেলটির সহজলভ্যতার উপর ।

প্রাচীনকাল থেকে মার্বেলের সমাদর সর্বত্র । স্থাপত্য ও নির্মাণ শিল্পে ভবন ও পরিবেশের নান্দনিকতায় ও শীতলতায় শ্বেত-পাথরের ব্যবহার অব্যর্থ । কৃত্রিম মার্বেলের ব্যবহার থাকলেও প্রাকৃতিক মার্বেলের আবেদন চিরঅম্লান ।

প্রবন্ধটি ইতিপূর্বে  স্থাপত্য ও নির্মাণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

নির্মাণ সামগ্রী সম্পর্কে আরও আর্টিকেল

#মার্বেল #শ্বেতপাথর #স্থাপত্য_ও_নির্মাণ  #ভবনের_অভ্যন্তরে_মার্বেলের_ব্যবহার #শ্বেত-পাথরের_ব্যবহার #মার্বেল_পাথরের_গুনাগুন

One thought on “মার্বেল-কাঠিন্যের আড়ালে কোমলতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *