গ্রামীণ জনপদের ঘর বাড়ি_ঘর-১০
গ্রামীণ জনপদের ঘর বাড়ি_ঘর-১০
[লেখকঃ স্থপতি মাহফুজুল হক জগলুল, প্রধান স্থপতি, ইন্টারডেক সিস্টেমস, ঢাকা]
গ্রামীণ জনপদের ঘর জামাল হাওলাদারের ঘর
গ্রামীণ জনপদের ঘর ; চরেরবাড়ি, কৈবর্তখালি, পিরোজপুর
জামাল হাওলাদার, বয়স আনুমানিক ৪০/৪২। কালিগঙ্গা নদীর জেলে। মাছ ধরে ওস্তাপাড়ার নদীর ঘাটে অপেক্ষারত পাইকারদের কাছে বিক্রি করে সংসার চালায়। মাঝে মাঝে বেশি লাভের আশায় নিজেই মাছ নিয়ে দাউদপুর, চলিশা, কলাখালি বা পথেরহাটে বসে। তবে অন্য জেলেদের থেকে তার কিছুটা সুবিধা আছে, তার নিজস্ব ছোট একটা মাছ ধরার নৌকা আছে যা অনেকের নাই। তবে জেলেপাড়ার অনেকের মতো একত্রে গভীর রাতে বেআইনি ‘ কারেন্ট জালে ‘ মাছ ধরতে গিয়ে ধরা খায়…….রক্ত পানি করা টাকায় কেনা তাদের কারেন্ট জাল পুড়িয়ে দেয়া হয়, তারপরও অনেক টাকা খরচ করে গ্রেফতারীর হাত থেকে রক্ষা পেতে হয়। কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ, ফিসারিজ ডিপার্টমেন্ট, এই তিন বাহিনীর টহল আর নজরদারির মধ্যে বৈধ ও অবৈধ এই দুই পথেই তাদের কালিগঙ্গা নদীতে ইলিশ মাছ ধরতে হয়, এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। একটা ইলিশ মাছের দৈর্ঘ ১০” এর নিচে হলে এটা অফিসিয়ালি জাটকা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তা ধরা বেআইনি।
পুরো কালিগঙ্গার এপার ওপার জাল পাতলে সেই জালের দৈর্ঘ হয় মোটামুটি ২৪০০’ আর আড়ে এই জাল প্রায় ২২’। এই জালের ওজন প্রায় ১৬/১৭ কেজি। এক কেজি জালের দাম মোটামুটি ১৬০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। সাধারণত কয়েকজন মিলে একটি জাল কেনে। জামালদের জাল ছিল ১২০০’ লম্বা, অর্থাৎ অর্ধেক নদী আড়াআড়ি কাভার করতো তাদের জাল। জালের এই মাপ সব নদীর জন্য সমান না,যারা একটু দক্ষিণে এগিয়ে কচা নদীতে মাছ ধরতে যায় তাদের জালের আড় অনেক বেশি, প্রায় ৬০’ থেকে ৭০’ কারন কচার গভীরতা অনেক বেশি, এই নদী দিয়েই এখন ঢাকা থেকে আগত প্যাডেল স্টিমার খুলনা যায়।
আগে কালিগঙ্গা নদী দিয়েই স্টিমার খুলনা যেতো কিন্তু কালক্রমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় এখন আর এ নদীতে স্টিমার চলে না। আমি নিজেই ছোটবেলায় এই নদীতে স্টিমারে হুলারহাট থেকে চাঁনকাঠি হয়ে শ্রীরামকাঠি গিয়েছি। নিঝুম কোলাহলহীন গ্রামীণ পরিবেশের সাথে সম্পুর্ন অপরিচিত জল ও যন্ত্রের সম্মিলিত প্রায় অপার্থিব এক ঝমঝম শব্দের হুঙ্কার তুলে স্টিমারগুলো আমাদের নদী দিয়ে যাবার সময় নদীর দুই পাড়ে গ্রামের বালক বালিকারা জড়ো হয়ে মহা খুশিতে হাত নাড়তো, তাদের চোখে মুখে থাকতো অপার বিস্ময়ের সীমাহীন মুগ্ধতা । সেকালে নাগরিক আধুনিক জীবন থেকে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন এই সুদুর প্রত্যন্ত গ্রামের বালক বালিকাদের কাছে লৌহ দৈত্যের মতো বিশাল এই প্রাগৈতিহাসিক প্যাডেল স্টিমারই ছিল আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার একমাত্র স্বারক। আমাদের নিজের বাড়ি যেহেতু কালিগঙ্গার একদম পাড়েই তাই আমার বাবাও শৈশবে ঐসব উৎসুক বিস্মিত হাত নাড়া বালক বালিকাদের একজন ছিলেন……বাবার কাছে শুনেছি তার শৈশবের একমাত্র aim in life ই ছিল স্টিমারের সুদক্ষ সারেং হওয়া।
খুব সুন্দর সুন্দর নাম ছিল স্টিমারগুলোর ……অস্ট্রিচ, টার্ন, ল্যাপচা, মাসুদ,গাজী ( পরবর্তীতে আগুনে পুড়ে নস্ট হয়ে যায়), ইরানী ( ১৯৭১ বোমা পড়ে ডুবে যায়)। বৃটিশ-ইন্ডিয়া আমলে ১৮৮৯ সালে দুটি কোম্পানির অধীনে দক্ষিণবঙ্গে এই প্যাডেল স্টিমার সার্ভিস ( রকেট সার্ভিস নামে বেশি পরিচিত) চালু হয়। বর্তমানে ডিজেল ইঞ্জিন সংযুক্ত স্টিমার ঢাকা থেকে ১৮ ঘন্টায় খুলনা ( মোরেলগঞ্জ) পৌছায়। আগে স্টিমারে কয়লার স্টিম ইঞ্জিন ছিল, আমি ছোটবেলায় চলমান স্টিমারের পাটাতনের নিচে একটা লোহার প্রকোষ্ঠে সারাগায়ে কালো কয়লায় গুড়া আর ঘাম মাখা প্রচন্ড গরমে সিদ্ধ হতে থাকা প্রকান্ড কুলিদের বেলচা হাতে বিরামবিহীনভাবে বয়লারের উত্তপ্ত চুল্লীতে সজোরে কয়লা ছুড়ে দিতে দেখেছি। এই অমানবিক দৃশ্য শৈশব থেকে আমার মনের মধ্যে কেমন করে যেন গেঁথে আছে….. সেই কুলিদের কথা মনে হলে আজো মনে হয় যেন মধ্যযুগের কোন নামহীন গভীর খনি থেকে উঠে আসা বিকাট দৈত্যসম লোহার শেকল পড়া জগতের সকল বিষয়ে অনুভূতিহীন একদল দাস বেলচা হাতে এখনো আমার মস্তিষ্কের মধ্যে বিরামহীন ভাবে সজোরে কয়লা ছুড়ে মারছে।
কালিগঙ্গা নদীতে জোয়ারে পানি দক্ষিন থেকে উত্তরে ওঠে আর ভাটিতে পানি উত্তর থেকে দক্ষিণে নামে। শত শত বছরের অভিজ্ঞতা আর জোয়ার ভাটার পানির গতির হিসাব মিলিয়ে মাছ ধরার কিছু বিশেষ যুতসই সময় প্রকৃতি এই জনপদের মামুষদের শিখিয়ে দিয়েছে, এই সময় গুলোকে বলে ‘ গোন ‘ বা ‘ খেও ‘ :
পানি গোন :
জোয়ার শুরুর মোটামুটি আধ ঘন্টা আগের সম্য যখন ভাটির তেজ কমে গেছে কিন্তু জোয়ার তখনো শুরু হয় নাই।
রাগ জোয়ার :
জোয়ারের পানির বেগ যখন তুংগে সেই সময়।
গইলা খেও :
জোয়ার শেষ হবার ঘন্টা খানেক আগের সময়।
চইলান খেও :
জোয়ার শেষ, ভাটির মাত্র শুরু হয়েছে তবে ভাটির পানির গতি তখনো পুরোপুরি শুরু হয় নাই সেই সময়।
তবে কোন গোন বা খেওয়ে বেশি মাছ পাওয়া যাবে তা আবার নির্ভর করবে চাঁদের পূর্নিমা আর অমাবস্যার উপর। সেই কোথায় ভারত মহাসাগর আর বঙ্গোপসাগরের জোয়ার ভাটার টান আর কোথায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার মাইল দূরের পৃথিবী নামক গ্রহের উপর চাঁদের মহাকর্ষীয় বল , কিন্তু এই সাগর, মহাসাগর আর সৌরজগতের চাঁদ নামক উপগ্রহটি সমবেত হয়ে একদম প্রত্যক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে জামাল হাওলাদারের জীবন ও জীবীকা। একারনেই আমি বলি জগৎ বড়ই রহস্যময়। নগরের অধিপতি সমাজের মানুষেরা যারা জামালের জন্য নিয়ম কানুন বানায় তারা কি জামালের জীবন জীবীকা নিয়ন্ত্রনকারী এই ভৌগোলিক ও সৌরজাগতিক নিয়মের কতটা প্রভাব তার জীবনাচরণে সে খোঁজ কখনো রাখে?
ছবির তার এই ঘরটির চেহারা দেখেই তার আর্থিক অবস্থার আন্দাজ পাওয়া যায়।ঘরের ফ্লোর নির্ভেজাল মাটির তৈরি। এরা ঘরের ভিতরে মেঝেতে ঘুমায়, জীবনে কোনদিন খাট বা চৌকিতে ঘুমায় নাই। জামালের এক মেয়ে এক ছেলে, মেয়ের নাম নীলুফার, বয়স ২৮, এই বয়সেই তাকে এরমধ্যে ৫ স্বামীর কাছ থেকে তালাক পাওয়ার অপমানজনক নির্মম অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। যার বাবার ঘরের চাহারা এমন সে যৌতুক দেবে কি চুরি করে?……. জামালের পড়শীরা এ নিয়ে নির্মম কৌতুক মস্কারা করে, বলে……..এক মোরগ দিয়া ১৮ জন বরযাত্রী খাওয়াইলে বিয়া টিকবে ক্যামনে?
নীলুফারের ৬ বছরের কন্যা সন্তান জিনুকে তার মায়ের কাছে রেখে সে ঢাকায় গেছে কাজ করতে। ঢাকায় সে কি কাজ করে তা কেউ জানেনা। বছরে দুএকবার সে বাড়িতে আসে শুধুমাত্র তার মেয়েকে আদর করার জন্য। সামান্য যে কদিন সে থাকে একমুহূর্তের জন্যও মেয়েকে চোখের আড়াল করে না, তারপর হঠাৎ একদিন মেয়েকে মায়ের বুকে পাগলীনীর মতো ঠেলে দিয়ে ঢাকায় তার ‘কাজের ‘ উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, জিনুর শত করুন কান্নায়ও তখন সে আর পিছনে ফিরে তাকায় না……… সে জানে তার এ জীবনে আর ফিরে তাকানোর কোন সুযোগ নাই।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন…… ” মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ ” …….. মাত্র ২৮ বছর বয়সে সমাজ ও মানুষের যে চরম নোংরা নির্মম চেহারা সে দেখেছে, যে সীমাহীন অপমান ও উলংগ লজ্জার মধ্য দিয়ে তার কৈশোর আর যৌবনের দিনগুলো পার করতে হয়েছে এই মেয়েটির, যে এখন মানুষ,পৃথিবী, সমাজ, রাস্ট্র, আইন আদালত, সামাজিক শিষ্টাচার সহ সব কিছুর উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে সে জন্য কি তাকে দোষ দেয়া যাবে, রবীন্দ্রনাথের কথা অনুযায়ী নীলুফারকে কি পাপিষ্ঠা বলা যাবে?…… আমি জানি না, তার চেয়ে বোধ হুমায়ূন আজাদ সঠিক বলেছিলেন…… “ মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক ”।
জামালের ছেলের বয়স মাত্র ২০, তার বয়স যখন ১৭ তখনই সে বিয়ে করে। বাবা,মা,বোনের মেয়ে,তার নিজের শিশু পুত্র আর তার স্ত্রী এই ৬ জন নিয়ে তারা ঘর নামক এই ছাপড়ার মধ্যে সবাই একত্রে পশুর মতো গাদাগাদি করে থাকে। ওদের ঘরটির পোতা প্রায় ৩’ উচু, তারপরও জোগার সময় পানি প্রায় পোতা ছুঁই ছুঁই করে কেননা ওদের নদীর কাছের এই এলাকাটা বেশ নিচু। বারবার জোয়ারের পানির সংস্পর্শে এসে ঘরের পোতা এখন ভাঙনমূখর কালিগঙ্গার পাড়ের মতো ভেঙে ভেঙে পড়ছে।
জামালের ঘরের চালের নাড়া পঁচে গেছে বহুদিন আগেই এখন নাড়ার উপর পলিথিনের সিট দিয়ে কোন রকমে বাঁচতে চাচ্ছে সে , সাধারণত নাড়ার চাল এক বছরের বেশি টেকে না, পৌষ মাঘ মাসে ধান কাটার পর সাধারণত নাড়ার চাল ছাওয়া হয়, পরের বছর অগ্রহায়ণ মাস আসতে আসতেই নাড়ার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। নাড়া বিক্রির পরিমাণের একক হলো আটি ( স্থানীয় ভাষায় বলে আডা)। এক আটি বা আডা নাড়া বলতে বুঝায় ২ হাত (৩’) লম্বা অনেক গুলা নাড়া যা ৪ হাত ( ৬’ ) লম্বা দড়ি দিয়ে পেচিয়ে একটা আটি বানানো যাবে, এরকম ২০ আটি ( এক কুড়ি) নাড়ার দাম ২১০০ টাকা। একটা ১৭ বন্দো ঘরের চাল ছাইতে ১.৫ থেকে ২ কুড়ি নাড়া দরকার। তার চালের প্রায় সব জায়গা দিয়েই পানি পড়ে, নীল পলিথিন সীটের তালি তেমন কাজে আসে না তাই বর্ষাকালে প্রায় প্রতিরাত্রই তাদের জন্য যেন এক একটা বেঁচে থাকার অভিযানের অভিজ্ঞতার রাত্রি। বৃষ্টিবিহীন রাতে খুব কাছে পুবদিক থেকে কালিগঙ্গা নদী থেকে ঠান্ডা বাতাস আসে তখন সারাদিনের পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত শরীরে আরামের ঘুম হয়।
পুবমুখী ঘরটির ব্যাড়া সব হোগলা পাতার শক্ত নিচের অংশ দিয়ে বানানো, ফ্রেম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে বাঁশের বা সুপারি গাছের কান্ডের চটা। উত্তর দিকে দুইটা জানালার মতো চৌকোনা ফুটা আছে, এছাড়া ঘরে আর কোন জানালা নাই। উত্তরে পাকেরঘরে আর শৌচাগারে যাবার জন্য একটা হোগলার বেড়ার দরোজা আছে। গোসলখানা বলতে কিছু নাই, সবাই কালিগঙ্গার পানিতে গোসল করে, তবে মহিলাদের জন্য সেটা বিশেষ কষ্টকর ও কখনো কখনো বিব্রতকর।
জামালের অনেক দিনের স্বপ্ন কিছু টাকা জমাতে পারলে বাকি টাকা সে এনজিও থেকে একটা বড় লোন নিয়ে বিরাট একটা মুদির দোকান দেবে……উদ্দীপন, রিক, ডাক দিয়ে যাই, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকের ‘ মেলা প্রকল্প ‘ সহ কতশত এনজিও তাদের চালাক চালাক ‘ স্যারেরা ‘ সব সময় নানান ম্যাজিক ম্যাজিক বুদ্ধি নিয়ে ঘুরঘুর করে তাদের পাড়ায়, ঋন জোগাড় করা কোন সমস্যাই না…… মুদির দোকানের ব্যবসা করে তার তখন অনেক টাকা হবে….. টাকা হলে দোতলা পুবমুখী একটা বিরাট ২৯ বন্দো পাকা কাঠের রঙিন পুরু টিনে নকশাকাটা ঘর উঠাবে আর তার নীলুফারকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসবে, জীবন তার প্রতি অনেক অবিচার করেছে……. এই নিষ্ঠুর সমাজের কোন কষ্ট যেন তার মেয়েকে আর ছুঁতে না পারে তার সব ব্যবস্থা সে নেবে তখন , মেয়ে শুধু খাবে আর ঘুমাবে, তাকে আর কোন কাজ করতে সে দেবে না ….. দুই নাতিকে নিয়ে সে দুপুর বেলা সারা গায়ে তেল মেখে কালিগঙ্গায় গোসল করে পেট ভরে খেয়ে নাতিদের ঘুম পারানী গল্প শুনাতে শুনাতে ঘুম পাড়াবে…….গল্পের বলার এক পর্যায়ে সুদীর্ঘ জীবনের ক্লান্তি নিয়ে জামাল হয়তো ঘুমিয়ে পড়বে কিন্তু দুস্টু নাতিরা তার শরীরকে ঘিরে তখনো হয়তো জেগে জেগে দুস্টুমি করতে থাকবে …..জগতে এর চেয়ে বড় কোন সুখের স্বপ্ন জামালের সর্বোচ্চ কল্পনাতেও আসে না, তবে এই সুখময় কল্পনার মাঝেও জামালের মনটা কেমন যেন খঁচখঁচ করে ওঠে …..এই এনজিওর ঋনের জটিল কিস্তি দিতে না পেরে পাশের ওস্তাপাড়া আর চরেরবাড়ি মিলিয়ে মোট প্রায় ২১ জনের নামে এখন হুলিয়া, তারা দিনের বেলা কেউ এলাকায় থাকে না, রাত গভীর হলে চুপিসারে এসে ঘরে ঢোকে আবার খুব ভোরে পালিয়ে নদীর ওপারে অন্য গ্রামে চলে যায়, কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী সরুপকাঠির বাওয়ালিদের নৌকা বহরের সাথে মাছ ধরতে অথবা গোলপাতা কাটতে পালিয়ে চলে গেছে সুদূর সুন্দরবনের দুবলার চর, টেকদিয়া, মেরালি, হিরন পয়েণ্ট বা আলোরকুল। সুন্দরবনের হিংস্র বাঘের থাবা থেকে হয়তো ভাগ্যগুণে বেঁচে যেতে পারবে কিন্তু এনজিওর ঋনের কিস্তিওয়ালা স্যারদের ( বা কাবুলিওয়ালা ) থাবা থেকে বাঁচার কোন উপায় নাই।
গভীর রাতে নক্ষত্রের ঘোরলাগা মায়াবী আলোয় নীরব কালিগঙ্গায় জাল পেতে নৌকায় দোল খেতে খেতে ক্লান্ত জামালের মনের গভীরে চলতে থাকে রমরমা মুদির দোকানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সুখস্বপ্ন বনাম সম্ভাব্য এনজিওর হুলিয়ার দুঃস্বপ্নের দ্বিধাদন্ধের দোলাচল।