শব্দ sound_in_landscape

শব্দ

শব্দ

[লেখকঃ স্থপতি সাদ বিন মোস্তাফা অন্নয় ]

শব্দ প্রকৃতির একটি অত্যন্ত শক্তিশালী উপাদান। ভোর থেকে রাত- এই সময়ে প্রাকৃতিক শব্দ নানা ভাবে পরিবর্তিত হয়। সূর্য ওঠার আগে দোয়েল ডাকতে শুরু করে। সূর্য ওঠার পরপর বিভিন্ন পাখি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে যাওয়ার সময় শব্দ তৈরি হয়।

ফার্মগেট এলাকায় এখন যদি কেও ঘরে বসে বাহিরে ভোর বেলায় মোরগের ডাক শুনতে পায়, তাহলে বেপারটা কেমন হবে? শব্দ দিয়ে সহজেই মানুষকে তার পরিপার্শের ব্যাপারে বিভ্রান্ত/ উদ্দীপ্ত করা যেতে পারে।

সাধারণ একটা গ্রামের পরিবেশে সাধারণ একটা দিন এ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি কি শব্দ শোনা যায় টা দেখা যাক।

ভোর থেকে একটা দুটো পাখি, তারপর ছোট ছোট পাখির ঝাঁক হাজির হয় আলো ফোঁটার সাথে সাথে। এইসব পাখির পর মানুষের কর্মব্যস্ততায় প্রাকৃতিক শব্দ ফিকে হয়ে যায়। কিছুটা মিশেও যায়। কারণ পশু পাখিও এই সময় মানুষের মতই কর্মব্যস্ত থাকে। হয়তো ঝোপঝাড় ভেঙ্গে একটা গুইসাপ সরে গেলো।

বাতাসের শব্দ সবচেয়ে জরুরি একটা উপাদান। বাঁশঝাড় আর ধানক্ষেত- এই দুই জায়গায় বাতাস দুই ধরনের শব্দ তৈরি করে। শালবনের ভেতর আবার অন্য রকম শব্দ তৈরি হয়। চাঁদের আলোয় যখন শাল গাছের ফুল থেকে পাপড়ি ঝরে পড়ে নিচের ঝোপঝাড়ের উপর- সেই শব্দ কিন্তু অনেক মিহি আর দিনের শব্দ থেকে অনেক আলাদা।

দুপুর বেলায় ঘুঘু পাখির ডাক আরেকটা স্পষ্টভাবে লক্ষ করার মত ঘটনা। যে সময় সূর্য সবচেয়ে বেশি রোদ ছড়ায় সে সময় বাতাসও থেমে থাকে এবং মানুষ- পশুপাখি সবাই শ্রান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয়। এই সময় আর কোন শব্দ থাকে না শুধু ঘুঘুর ডাক ছাড়া। ঘুঘু ডাকা অলস দুপুর হয়েছে এভাবেই। তবে এলাকা বিশেষে অন্য উপকরণ ও যোগ হতে পারে। যেমন কিশোরগঞ্জে বড় সবুজ ঝিঝি পোকা জঙ্গলে বসে অবিরাম ডাকতে থাকে অসম্ভব জোরে। একসাথে হঠাৎ হঠাৎ থেমে যায়- তারপর আবার ডাকতে থাকে।

শেয়ালের ডাক একটা গ্রামীণ সন্ধ্যার মূল উপকরণ।

রাতে পথের পাশে ছোট ছোট ঝিঁঝিঁ পোকা বা ব্যাঙের ডাক এবং গভীর রাতে রাতচরা, বক,বনবিড়াল বা প্যাঁচার ডাক।

এলাকাভেদে বিশেষ উপাদান যেমনঃ কুমিল্লা বা পার্বত্য চট্টগ্রামে তক্ষকের ডাক।

ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে শব্দও পরিবর্তিত হয়। বর্ষাকালে খোলা জলাভূমিতে বাতাসের দুরন্ত শব্দ। বড় বড় কোলাব্যাঙের সন্ধ্যাকালীন বিকট সঙ্গীত সাধনা এবং বাতাসহীন গুমোট সন্ধ্যায় পোকামাকড়ের ডাকাডাকি ইত্যাদি।

পানির শব্দ, সাগরের শব্দ, শীতকালে গাছের পাতায় ও ঘরের চালে শিশির পড়ার শব্দ ইত্যাদি।

এতক্ষণ ধরে উল্ল্যেখ করা সবকিছুর একটা সাধারণ বৈশিষ্ঠ আছে। এই ঘটনাগুলো কিছু না কিছুর উপর নির্ভরশীল। যেমনঃ শিশির এর শব্দ শুনতে চাইলে উঁচু গাছ এবং নিচু গাছ থাকা লাগবে যেগুলোর পাতা বেশ বড়। ধাতব চাল বা সানশেড থাকা লাগবে।

বাতাসের শব্দ শুনতে চাইলে খোলা বিস্তীর্ণ মাঠ এবং বড় গাছ লাগবে।

শহরের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে এইসব শব্দ দরকার আছে অবশ্যই। এইসব শব্দের অভাবে মানুষের কোমল অনুভূতি হারিয়ে যায় হয়তো।

ঢাকা বা চট্টগ্রাম বা অন্যান্য বড় শহরে যে সব উদ্যান এবং সবুজ জায়গা তৈরি করা হচ্ছে, পরিকল্পনার সময় শব্দ কে ল্যান্ডস্কেপের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে মাথায় রাখতে হবে।
—– —- —–

IF YOU ARE A LANDSCAPE ARCHITECT and NOW PRACTICING IN BANGLADESH please join the group LANDSCAPE ARCHITECTS BANGLADESH

One thought on “শব্দ

  1. রাতে শেয়ালের ডাক,
    টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ
    এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে

Leave a Reply to Moniruzzaman Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *