ড্যাপ_২০২২-২০৩৫

ড্যাপ_২০২২-২০৩৫ পঠন ও একজন অশিক্ষিতের অনুধাবনঃ

ড্যাপ_২০২২-২০৩৫ পঠন ও একজন অশিক্ষিতের অনুধাবনঃ

স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ, ফোর ওয়ালস, উত্তরা, ঢাকা

ড্যাপ_২০২২-২০৩৫; বিশাল কলেবরের বই। পঠন কষ্টসাধ্য, কয়েকজন শিক্ষিতজনের কাছে অনুরোধ করেছিলাম বুঝিয়ে দিতে। তারা অপারগতা দেখাতে আমি নিজেই পড়তে বসে গেছি।

পঠনপুর্ব প্রশ্ন ছিল, স্থপতিদের কি কাজ কমে যাবে? আমার উত্তর না, কমবে না। প্রথমে হয়ত কিছুদিন একটু স্থবিরতা দেখা যাবে। তারপরে আস্তে আস্তে কেটে যাবে। যেহেতু ঢাকা শহরে দেশের সমস্ত সু্যোগ, অতএব মানুষ ঢাকামুখী হবেই। ঢাকায় আসলে মানুষের থাকার যায়গার প্রয়োজন হবেই। তাহলে বাড়ি তৈরী করতে হবেই। আর স্থপতিরা এতে কাজ পাবোই। আর যেহেতু ড্যাপ-এর নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে থাকার যায়গা কমিয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে আরও বেশি নতুন বাড়ি তৈরীর প্রয়োজন পরবে। সেহেতু স্থপতিদের কাজের সুযোগ আরও বাড়বে।

ড্যাপ-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে যা বলা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে দারুণ প্রস্তাবনা।
এই “পরিকল্পনার অন্তরনিহিত দর্শন “-এ বলা হয়েছে
“এই পরিকল্পনায় শহরের সংজ্ঞা এবং এর মূল পরিচয় মানুষের বসতি ও আশ্রয়। আশ্রয় অর্থ যেখানে মানুষ বাস করে, কাজ করে এবং জীবনের সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলোকে উপভোগ করে।… … … অবকাঠামোর পরিকল্পনা, প্রস্তাব—সবই এই লক্ষ্যকে অর্জনের জন্যই প্রণীত হয়েছে। একই সঙ্গে শহরের উন্নয়নের সূচকগুলোর  (Development Indicator) লক্ষ্য হলো মানুষের জীবনে ও জীবনমানে আসলে কী গুণগত উন্নতি হলো তার পরিমাপ করা। এ পথ ধরেই সম্ভব নাগরিকের জন্য এক মানবিক শহরের পরিকল্পনা তৈরি করা। “ (পৃষ্ঠা-৭, ১ম খন্ড)।
ড্যাপ_২০২২-২০৩৫ এর হিসাব অনুযায়ী “প্রস্তাবিত নগর এলাকা ৬০.২৫% (প্রায় )”।

ড্যাপ এলাকার আয়তন ১৫২৮ বর্গ কি,মি,। তাহলে নগর এলাকা হলো ৯২০.৬২ বর্গ কি,মি,। (পৃষ্ঠা-২৬, ১ম খন্ড) পৃষ্ঠা-৩৪, ১ম খন্ডে বিভক্তি আর বৈষম্য নিরসনের কথা বলা হয়েছে। খুবই ভালো প্রস্তাব। পৃষ্ঠা-৪৩, ১ম খন্ডে স্থাপনা নির্মাণে রাস্তার রাস্তার ন্যূনতম প্রস্থের শর্ত পরিমার্জন করা হয়েছে। এখানেই বলা হয়েছে ঢাকা শহরে সরু রাস্তার ৩৬.২৩ শতাংশ। এসব এলাকায় এম্বুলেন্স ও অগ্নিনির্বাপক যানের প্রবেশগম্যতা এভাবে হরণ করা হলো।

পৃষ্ঠা-৪৩, ১ম খন্ডে পথচারী ও অযান্ত্রিক যান চলাচলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পথচারী পথে হাঁটতে গেলে ফুটপাতের প্রয়োজন। পৃষ্ঠা-১৭৩, ১৭৪, ১৭৫- ১ম খন্ডে-এ ফুটপাত কেমন হবে তার নির্দেশনা দেয়া আছে। সে হিসাব অনুযায়ী ঐ ৩৬.২৩ শতাংশ রাস্তায় ফুটপাত সম্ভব নয়। অযান্ত্রিক যানের (রিক্সা) মাপ ১.২মি ধরে চলাচলের জন্য ২.০মি প্রস্থ ধরা হয়েছে। তাহলে রিক্সাওয়ালাদেরকে এই মাপের মধ্যে চালানোর কায়দা রপ্তের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
আবার, পৃষ্ঠা ১৭৬, ১ম খন্ডে অযান্ত্রিক যান চলাচলের জন্য প্রস্থের মাপ ১০-১৫ ফুট (উভমুখী)- এর কথা বলা হয়েছে।
পৃষ্ঠা-১৮০, ১ম খন্ডে হকারদের জন্য বিধিমালা দেয়া হল, যেখানে ন্যুনতম ৬০ শতাংশ হকারদের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব আছে, এরপরে ১মি যায়গা চলাচলের জন্য রাখতে বলা আছে। তাহলে ফুটপাতের মাপ কত হলো আর রাস্তার জন্য কত থাকল?

ড্যাপ_২০২২-২০৩৫ এ পৃষ্ঠা-১১৫, ১ম খন্ডে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।

যেখানে “ওই ব্লকের আয়তনের নন্যূতম ৪০%~৫০% এলাকা উন্ক্তমুস্থান যেমন পার্ক বা খেলার মাঠ হিসেবে সমর্পণ করতে হবে”। পৃষ্ঠা-১১৬, ১ম খন্ডে বলা হয়েছে “প্রযোজ্য জমির একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পরিমাণ জমি ঐ এলাকার জনগণের জন্য পার্কও খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা এর নিকট সমর্পন করতে হবে, সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা এ জমি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবেনা”। এটা খুবই ভালো প্রস্তাব।

৩.৬- উন্নয়ন প্রাবল্য/তীব্রতা ব্যবস্থাপনা, পৃষ্ঠা-১০২, ১ম খন্ড,

এখানে বলা আছে, “সড়কের প্রশস্থতা, জনঘনত্ব, মোট মেঝের ক্ষেত্রফল সহ অন্যান্য যে সকল বিষয় এখানে বর্ণিত আছে উল্লেখিত সে সকল বিষয় সংলগ্ন অন্যত্র যাই নির্দেশনা থাকুক, এই অধ্যায়ের নির্দেশনাকেই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করতে হবে। এর বাইরে ইমারত সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে ইমারত বিধিমালাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানসমুহের বিস্তারিত নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে।“
এই অধ্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পাওয়া যাবে একটি প্লটে মোট কত বর্গফুট/বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়া পাওয়া যাবে, সর্বোচ্চ কতটি এপার্ট্মেন্ট ইউনিট বানানো যাবে। এপার্ট্মেন্ট ইউনিট-এর আকার কেমন হবে। সরাসরি কততলা বানানো যাবে তা বলা হয়নি, কিন্তু সর্বমোট কতটুকু বানানো যাবে তা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সর্বমোট কতগুলি ইউনিট বানানো যাবে তাও নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। তাহলে তলার সংখ্যা আর বিবেচ্য রইলো না।
সারণী-৩.৫ ও সারণী-৩.৬ অনুযায়ী যথাক্রমে প্লটভিত্তিক FAR ও এলাকাভিত্তিক FAR বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করতে হবে। এলাকাভিত্তিক FAR নির্ধারণ করা হয়েছে একটি এলাকার জনসংখ্যা ধারনক্ষমতার ভিত্তিতে একটি গানিতিক সুত্র ব্যবহার করে। কিন্তু প্লটভিত্তিক FAR আবাসিক ও জীবিকার মৌলিক চাহিদার বিবেচনায় করা হয়েছে। (পৃষ্ঠা-১০৬, ১ম খন্ড) তাহলে এই সারণী-৩.৫-এর ভিত্তি হলো আনুমানিক। “যেভাবে ইমারত বিধিমালায়” করা হয়েছিল বলে পৃষ্ঠা-১০২, ১ম খন্ডে বলা আছে।
কিন্তু এলাকাভিত্তিক FAR এর হিসাব মেলেনা।
উদাহরনঃ
সূত্রঃ(পৃষ্ঠা-১০৬, ১ম খন্ড)
এলাকাভিত্তিক FAR = ব্লকেরসর্বোচ্চ নেটজনঘনত্ব (পরিবার/কাঠা) x ব্লকেরগড় আবাসিক ইউনিটেরআকার/ ৭২০
DNCC_Ward-08-P, মিরপুর-১ শাহ আলীঃ ১.৭ x ৯১৮/৭২০= ২.১৬৭৫ (পরিশিষ্ট ৩.৬ হতে প্রাপ্ত)
কিন্তু পরিশিষ্ট ৩.৬-এ এই মান ২.১
DNCC_Ext_Ward- 52-P ঃ ১.৪ x ১৫৭৯/৭২০= ৩.০৭০২ (পরিশিষ্ট ৩.৬ হতে প্রাপ্ত)
কিন্তু পরিশিষ্ট ৩.৬-এ এই মান ৩.৬
ভিত্তি FAR হলো এলাকাভিত্তিক FAR এবং প্লটভিত্তিক FAR এর মধ্যে যেটি কম (পৃষ্ঠা-১০৫, ১ম খন্ড)।
আর সর্বোচ্চ FAR হলো, (পৃষ্ঠা-১০৫, ১ম খন্ড)
১- প্লটভিত্তিক FAR যদি এলাকাভিত্তিক FAR এর চেয়ে বেশি হয়, তবে প্লটভিত্তিক FAR ।
২- প্লটভিত্তিক FAR যদি এলাকাভিত্তিক FAR এর চেয়ে কম হয়, তবে এলাকাভিত্তিক FAR, ভিত্তি FAR বা প্লটভিত্তিক FAR এর সাথে যতধরনের সুবিধা FAR যোগ করা হোক না কেন?
DNCC_Ward-14-P, মিরপুর-১০, ২০ ফুট (৬.১০ মি) চওড়া রাস্তার পাশে
ভিত্তি FAR ২.৭ এবং সর্বোচ্চ FAR ২.৭৫, সুতরাং যতই সুবিধা FAR দেয়া হোক না কেন, তেমন কোন পরিবর্তন নেই।
পরিশিষ্ট ৩.৬, পৃষ্ঠা-৪৬২, ১ম খন্ড-
DNCC_Ward-18-P, গুলশান-বারিধারা, Functional Net Habitable Area (৫০%), FAR – ৫.৮
DNCC_Ward-19-S, কড়াইল, Functional Net Habitable Area (৬৯.৫৩%), FAR – ১.৩
আমি কোন প্রশ্ন করব না। বৈষম্য, অসঙ্গতি দূরীকরণের আবদার তো করতেই পারি।