ড্যাপ নাকি ডেঁপো?
ড্যাপ নাকি ডেঁপো?
-স্থপতি তরিকুল ইসলাম লাভলু, বেজটেক ইনফোটেক, ঢাকা
প্রস্তাবিত ড্যাপ যতদিন ধরে যে পরিমান খরচে ও যত ঢাকঢোল পিটিয়ে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, সেই পরিমাণ জন আকাঙ্খা ও নাগরিক সমস্যার সমাধান এতে পরিলক্ষিত হচ্ছে না কেন? একটা কী আবার তেমনই এক চক্রান্ত? যেমন চক্রান্ত ছিল ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীর মত একসময়ের আদর্শ আবাসিক এলাকায় জমির মূল্যবৃদ্ধির দুরভিসন্ধি নিয়ে এসব অঞ্চলে বানিজ্যিক স্থাপনার অনুপ্রবেশ ও উচ্চতার ইচ্ছেমতো পরিবর্তন ঘটানো।
লক্ষ্যনীয় যে এই স্বাধীন দেশে নগর পরিকল্পনায় এযাবৎ যতগুলি সিদ্ধান্ত গৃহিত ও কার্যকর হয়েছে সেসবের প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে সমাজের উচ্চবিত্ত, সরকারি আমলা ও শুধুমাত্র নীতিনির্ধারকেরাই উপকৃত হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে একদা ২৫০ টাকা কাঠায় কেনা জমি তাঁরা ৫ কোটি টাকা কাঠায় বিক্রি করেছে।
এবারের ড্যাপেও এলাকা ভেদে ভবন উচ্চতা ও পরিকল্পনার যে রূপরেখা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত এসেছে সম্ভবত একই ধরনের মানসিকতা থেকে। সমাজের আপামর জনগোষ্ঠীর স্বার্থের কতটা এতে রক্ষিত হবে সেটা শুরুতেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।
এই ঢাকা শহরে ২.৫, ৩ ও ৫ কাঠার আবাসিক প্লট বরাদ্ধ দিয়ে তাতে ভবন নির্মাণের যে নীতিমালা দেয়া হয়েছে তাতে প্রতি দুই ভবনের মাঝখানে আস্তাকুঁড়ই রচিত হয়েছে কেবল। আর নীতিমালার আলোকে নির্মিত ভবনগুলো প্রতিটি আবাসিক এলাকাকে করেছে বসবাসের অযোগ্য।
অথচ দেশের যে শহরে কাঠাপ্রতি এক থেকে তিনটি পরিবারের বসবাস একটা বাস্তবতা সে শহরে ৬০ জনের জন্য ন্যুনতম এক একর জায়গা বরাদ্দ দিয়ে তাতে ন্যুনতম ৫০ ভাগ উন্মুক্ত রাখার বাধ্যবাধকতা সহ সুউচ্চ ভবন নির্মানের নীতিমালা নিলে যে খোলামেলা পরিসর রচিত হতো তাতে একটা আবাসিক এলাকা উদ্যানে ও গাছপালায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারতো। এতে আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠ ও সমঅংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অন্যান্য নাগরিক সুযোগ সুবিধাদির সংকুলান করা যেতো অনায়াসেই।
ঢাকার উত্তরা, গুলশান, বনানীতে এই নীতিনির্ধারকেরা যে যে ভুল করেছে তার সবগুলিরই এঁরা পুনরাবৃত্তি করেছে উত্তরার তৃতীয় ফেজ এবং পূর্বাচল উপশহরের সবটা জুড়ে। একই রকম জানজট, জনজট ও নাগরিক সুবিধাদির চরম অপ্রতুলতা এই সব এলাকার অনিবার্য নিত্যসঙ্গী হতে যাচ্ছে এটা সুনিশ্চিত।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প প্রনয়ণ ও বাস্তবায়নে যে দীর্ঘসূত্রিতা, অপচয় ও অপব্যয় পরিলক্ষিত হয় তাতে প্রকল্পের নামে পর্বতের মুষিক প্রসবের মতো ঘটনাই ঘটে বারংবার। জন দুর্ভোগ আর শেষ হয় না।
প্রস্তাবিত ড্যাপ পর্বত সমান আমলা ও অতিবিজ্ঞদের মস্তিষ্কপ্রসূত তেমনই এক মুষিক ছাড়া সম্ভবত বড় কিছু নয়।
2 thoughts on “ড্যাপ নাকি ডেঁপো?”