বর্তমান ড্যাপের স্থগিতকরণ এবং নতুন ড্যাপ প্রণয়ন প্রয়োজন
বর্তমান ড্যাপের স্থগিতকরণ এবং নতুন ড্যাপ প্রণয়ন প্রয়োজন
ভূমিকা
বর্তমান ড্যাপের স্থগিতকরণ এবং নতুন ড্যাপ প্রণয়ন প্রয়োজন । অনেক বছর পূর্বে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বাস্থই এর সেমিনারে বলেছিলেন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর সবচেয়ে নিরাপদ জমিতে হলো রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মাটির নিচের ফল্ট এর উপরে এয়ারপোর্ট আর আরেক ফল্টের উপরে বৃহৎ একটি আবাসিক প্রকল্প।
এক
তিনি আরো বলেছিলেন কোনো নিরাপদ মহানগরীর উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য শুধু ভূমির উপরের অংশ নিয়ে চিন্তা না করে মাটির নিচের অংশটুকু নিয়েও ভাবনা খুব প্রয়োজন। ইউ.ডি.ডি কর্তৃক ময়মনসিংহ শহরের পরিকল্পনা করার সময়ে বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল। বিষয়টি দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেতে বেশ সাড়া ফেলেছিলো। আসলে কোনো স্থানের উপরের ভূমির সাথে ওই এলাকার নিচের মাটির সামগ্রিক চরিত্র, ভূমিকম্প সহায়ক বিপর্যয় ডেকে আনা ফল্ট এর অবস্থান, এ বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পনা করার আগে ভাববার বিষয়। তাহলে পরিকল্পনার জন্য মাটির উপরের এলাকার ক্ষেত্রে নির্মাণ ও উদ্যান এর এলাকাগুলো নিরাপদে চিহ্নিত করা যায়। ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রণীত বর্তমান ড্যাপ আমার জানামতে মাটির নিচের চরিত্র না জেনেই শুধু উপরের মাটি নিয়ে ভেবেছে।
দুই
মূল ড্যাপে যে সকল অঞ্চল নিয়ে এলাকার মোট পরিমান ও সেই পুরো এলাকার জনঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল তার মধ্যে গাজীপুর এখন আর রাজউক এর আওতাভুক্ত নয়! গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন হয়েছে এবং এখন থেকে সেই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের এলাকা নিয়ন্ত্রণ হবে! তাহলে ড্যাপ এর সর্বমোট বর্ণিত জমি এবং সে জমির উপর ভিত্তি করে যে মূল জনঘনত্ব প্রস্তাব হয়েছিলো তা কিন্তু পাল্টে গেলো!
তিন (ড্যাপের স্থগিতকরণ)
ড্যাপ এর অন্তর্গত বেশ কিছু এলাকা রাজউক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়, তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আলাদা, তাদের নিয়ম আলাদা! তাই ওই এলাকার যে জনঘনত্ব ড্যাপে নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবের নির্মাণের সাথে মিলছেনা! ফলে গেজেটকৃত মূল ড্যাপের ভাবনার সাথে বৈরিতার সৃষ্টি করছে,তথ্য ও উপাত্ত যদি কিছু থেকেও থাকে তা পাল্টে যাচ্ছে! তাহলে যে তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে ড্যাপ লেখা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতির সাথে তা মিলছেনা!
চার
ইদানিং ভূমিকম্পের কাঁপুনি এ নগরীকে দোলাচ্ছে! ভূমিকম্প বিবেচনায় মহানগরীর অনেক স্থানে নির্মাণ কিন্তু অনেক বেশি বিপদজনক, ড্যাপ সে এলাকাতে ও নির্মাণের নিমিত্ত অনুমোদন দিয়ে রেখেছে ও নির্মাণ চলছে! আগামীর জন্য ভয়ংকর একটি অবস্থা।
পাঁচ (ড্যাপের স্থগিতকরণ)
সেই আদি বিষয়টিতো এখনো চালু আছে! ড্যাপের মাধ্যমে দেশের জলাধার আইনকে উপেক্ষা করে জলাধার ভক্ষণ এর মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন এবং নির্মাণ বাণিজ্য! প্রকৃতির জলের অংশ,সবুজ এর অংশ বালুর দাপটে ক্রমশঃ সাদা হয়ে যাচ্ছে! মহানগরীর নিম্নাঞ্চল উঁচু হচ্ছে,মহানগরের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ,এক সময়ে অ-নিষ্কাশিত জলের তলে শহর নিমজ্জিত হবে! প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাবে।
উপসংহার (ড্যাপের স্থগিতকরণ)
এই সকল কিছু নিয়ে নিবিড় ভাবে ভাবলে বর্তমান ড্যাপটি দশ বা বারো পৃষ্ঠার আংশিক সংশোধন না করে বরং এই ড্যাপ পুরোপুরি স্থগিত কিংবা বাতিল করা প্রয়োজন! কারণ যে চিন্তার ফসল এই ড্যাপ তা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য বৈরিতা আনয়ন বাদে আর কোনো উপকারে আসবেনা! এখন প্রয়োজন এই সমাজের বিভিন্ন পেশার সকল পেশাজীবী ও নাগরিকদের একত্রিত করে তাদের মতামত নিয়ে মহানগরীর সমগ্রিক সমস্যা সমাধান কল্পে ও জনগণের কল্যাণের জন্য নতুন ভাবে ড্যাপ প্রণয়ন করা! যারা সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারী তারা বিষয়গুলো নিয়ে একটুখানি নিবিড়ভাবে ভাবুন! অকার্যকর ড্যাপটি স্থগিত কিংবা বাতিলের কার্যক্রম নিন,নতুন জনবান্ধব ড্যাপের চিন্তা করুন।
লেখক: স্থপতি কাজী গোলাম নাসির
ঢাকাবাসীর জন্য DAP_2016-2035 , একুশের শেষপ্রহরের উপহার এবং সকলের নতুন ভাবনার শুরু