গ্রামীণ জনপদের ঘর

গ্রামীণ জনপদের ঘর -বাড়ি_ঘর-৮

গ্রামীণ জনপদের ঘর -বাড়ি_ঘর-৮

[লেখকঃ স্থপতি মাহফুজুল হক জগলুল, প্রধান স্থপতি, ইন্টারডেক সিস্টেমস, ঢাকা]

গ্রামীণ জনপদের ঘর কালাম হাওলাদারের ঘর

গ্রামীণ জনপদের ঘর ; গ্রামঃ উদয়কাঠি, পাড়াঃ ষোলকাঠা, জেলাঃ পিরোজপুর

কালাম হাওলাদার, বয়স কত জিজ্ঞাসা করলে দাত ‘ কেলাইয়া ‘ হাসে, ঠিক বলতে পারে না কত বয়স। বলে ‘ সংগ্রামের ‘ বছরের পর তার জন্ম। আমার মনে হয় তার বয়স ৩৮/৪০ হবে।

বাবা হালিম হাওলাদার পেশায় ছিলেন দরিদ্র ‘ টাবুইর‍্যা ‘ নৌকার মাঝি, স্থানীয় ভাষায় ছোট ছইযুক্ত যাত্রীবাহী নৌকাকে বলা হয় টাবুইর‍্যা নৌকা। প্রায় ২ দশক আগে নৌকায় শ্যালো ইঞ্জিন যুক্ত হবার পর থেকে হালিম হাওলাদারের মন্থর গতির বৈঠা বাওয়া নৌকার ‘ বেইল ‘ শেষ হয়ে গেছে। সেই কালে আমাদের এলাকার এইসব নৌকার মাঝিদের আলাদা একটা ভাবসাব ছিল….. সাধারণত যাত্রী নিয়ে সকালে রওনা দিয়ে দুপুরের মধ্যে গন্তব্যে পৌছে দিতো….. যাত্রী পৌছানোর পর মাঝি সাহেবকে খাঁটি সরিষার তেল দিতে হতো নদীতে গোসল করার জন্য, তারপর তাকে ঘরের বৈঠকখানায় খাটের উপর বেশ কয়েক পদ সহ বিশাল এক গামলায় মোটা ইরি চালের ভাত দেয়া হতো….. মাঝিরা যেহেতু গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াতো তাই খাবার বেলায় খাতির যত্ন কম হলে তা গৃহস্থের বদনাম হিসাবে তারা রটিয়ে বেড়াতো, তাই সচেতন গৃহস্থরা এব্যাপারে খুব সজাগ থাকতো……. স্থানীয় ভাষায় বলতে গেলে খুব ‘ আস্তিক ‘ করে খাওয়াতো কারন ছেলেমেয়ের বিয়েসাদীর সময় গুরুজনেরা বয়স্ক মাঝিদের কাছ থেকে গৃহস্থের আতিথেয়তার মান কেমন তার খোজঁখবর নিতো।

হালিম হাওলাদারের চার সন্তানের মধ্যে কালাম তৃতীয়, বাকি দুই পুত্র ও তাকে নিয়ে একই উঠানকে ঘিরে তাদের আরো একইরকমের দুটি হতদরিদ্র ঘর। আশিউর্ধ বৃদ্ধ পিতা হালিম হাওলাদার ও তার স্ত্রী পর্যায়ক্রমে এই চার দরিদ্র পুত্রের উপর ঘুরে ঘুরে এক এক ঘরে খাওয়া দাওয়া করে……..বৃদ্ধ বৃদ্ধার শেষ জীবনে পুত্রদের উপর এই চরম নির্ভরশীল জীবন মোটেই সুখের বা সন্মানের না । তবে তিন মাস পর পর পুত্রদের সংসারে তার কদর একটু বাড়ে কেননা তখন সে সরকারী বয়স্ক ভাতা হিসাবে ১৫০০ টাকা পায়।

চরম দারিদ্র্যের কারনে জীবনে মাত্র ৩ দিন স্কুলে গেছে হালিম, মাত্র ৫ বছর বয়স থেকে কলার ব্যবসার জোগালি হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু । তার বিবাহিত জীবনের প্রথম তিনটি সন্তানই মারা যায় বর্তমানে এক পুত্র,দুই শিশু কন্যা আর স্ত্রী নিয়ে তার হতদরিদ্র সংসার। পুত্রটির নাম মামুন, বয়স ১৫,সে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে, বর্তমানে কিছু করেনা। শিশু কন্যাদের একজনে নাম মারিয়া সে মাত্র প্রথম শ্রেনীতে পড়ে, অন্যটির নামটি খুব সুন্দর, সুখী…… এমন সুন্দর নাম এই অশিক্ষিত দম্পতি কিভাবে রাখলো তা আমার কাছে এক অপার বিস্ময় , সুখী এখনো স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি…… খুব সম্ভবত কয়েক বছর মধ্যে বড় ভাইয়ের মতো দারিদ্র্য আর অসচেতনতার কারনে ওদেরও পড়াশোনা পর্ব শেষ হয়ে যাবে। তবে হালিম ও তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম আমাকে কথা দিয়েছে যত কস্টই হোক তার কন্যাদের পড়াশোনা তারা বন্ধ করবে না……. দেখা যাক তারা কথা রাখতে পারে কিনা।

হতদরিদ্র হলেও কালামের পদবিখানা কিন্তু বেশ খান্দানী……. ‘ হাওলাদার ‘……. এই পদবি কিন্তু এক কালে বরিশাল অঞ্চলে খুব ধনবানদের পদবি ছিল…..যারা জমিদার বা দেশীয় রাজাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট শর্তে বিপুল পরিমান নিস্কর জমি ভোগকারী ছিল তাদের বলা হতো হাওলাদার। ‘ হাওলা ‘ আরবি শব্দ, যার অর্থ তত্ত্বাবধানে নেয়া…… সৈনিক হাবিলদার আর হাওলাদার একই শব্দ। তবে ইতিহাসের এই পর্যায়ে কালাম হাওলাদার বিপুল ভূমির ভোগকারী হিসেবে সম্পর্কিত তার পদবিকে চরম পরিহাসে পরিনত করে বর্তমানে ১০০% নিরেট ‘ ভূমিহীন হাওলাদারে ‘ পরিনত হয়েছে।

মাতৃ সূত্রে পাওয়া ছবির এই অতি ক্ষুদ্র বাস্তুভিটাটাই তার জীবনের একমাত্র স্থাবর সম্পদ। মাতৃ সূত্র বলছি এ কারনে যে ওরা হাওলাদার হলেও যে বাড়িতে ওরা থাকে সেটা কিন্তু হাওলাদার বাড়ি না, সেটা শেখ বাড়ি……. এটা ওদের নানা বাড়ি, ওর নানার সামান্য সম্পত্তি ওর মা পেয়েছে সেই সুত্রে ওরা এখানে থাকে…..ওদের তিনটি ঘর বাদে বাকি ১২ টি ঘরের সবাই বহু পুরানো শেখ বংশের মানুষ, ওদের তিনটি ঘর শেখ বাড়ির মাঝে অনেকটা ‘ ছিট মহলের ‘ মতো। মোদ্দা কথায় কালামের বাবা হালিম হাওলাদার ছিলেন একজন স্ট্যান্ডার্ড ঘর জামাই। তবে সে সখে ঘর জামাই হয় নাই, সামান্য পৈতৃক সম্পত্তি যা তার প্রাপ্য ছিল তা থেকে তাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের বাপদাদার ভিটা কদলতলা ইউনিয়নের সাতবেকুটিয়া গ্রামে, বর্তমান এলাকা থেকে সেটা প্রায় ৮ / ১০ মাইল দূরে। এক বংশের লোক অন্য বংশের একই উঠান ঘেরা বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস গ্রামীণ পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক প্রেক্ষাপটে খুব সম্মানজনক নয়। এদের স্থানীয় ভাবে বিদ্রুপ করে ‘ উমাইন্যা ‘ বলে……. এক মুরগির ডিম অন্য মুরগি ওম দিয়ে বাচ্চা ফোটানো ঘটনার ইংগিত দিয়ে এই ‘ উমাইন্যা ‘ শব্দের বিদ্রুপাত্মক ব্যবহার। এই অসন্মান আর বিদ্রুপই কালামের দুস্বপ্নময় আশৈশব সহচর, এর মধ্যেই সে আর তার ভাইয়েরা বড় হয়েছে, একই অসম্মানের মধ্যে এখন বড় হচ্ছে তার সন্তানেরা। যারা আমাদের গ্রামীণ মানুষের আচার আচরণের সাথে পরিচিত নয় তারা এই রসায়নটা বুঝবে কিনা আমি জানিনা। শেখ বাড়ির ঐতিহ্য,ইতিহাস, খান্দানী ভাবসাব বা নানা রকম সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে হাওলাদাররা অপাংতেয় কেননা তারা উমাইন্যা ……তারা না পারে একাত্ব হতে, না পারে চারিদিকের ক্রিয়াশীল ঘটনাবলী এড়িয়ে যেতে। এ প্রসংগে আমি জিজ্ঞেস করতেই কিছুদিন আগেও হালিমের চোখ কস্টে ভিজে উঠেছিল। পেটের জ্বালা সহ্য করা যায় কিন্তু নিরন্তর অস্তিত্বের অপমান সহ্য করা কঠিন।

গ্রামীণ মানুষের শেকড়ের মনস্তত্ত্ব না বুঝেই গ্রামে গ্রামে মানুষের জন্য সরকারী খাস জমিতে কয়েক দশক ধরে লাইন ধরে এগ্রাম সেগ্রামের মানুষদের একত্র করে গুচ্ছগ্রাম প্রজেক্ট করা হচ্ছে……..তাদের খোজ খবর করলেই দেখা যাবে তারা নাম মাত্র সেখানে থাকে ত্রানের খাতায় নাম বজায় রাখার জন্য কিন্তু তারা পড়ে থাকে তাদের বাপদাদার ভিটার ভাংগা ঘরে না হয় ঘুমিয়ে থাকে নিজের বাড়ির অন্য জ্ঞাতিগুষ্টি বারান্দায়।

গ্রামীণ মানুষের মনস্তত্ত্বে বাপদাদার ভিটায় ঘর তোলা যে কত মূল্যবান অনুভূতি তা যারা গ্রামের সাথে সম্পৃক্ত নয় তাদের বুঝাতে কস্ট হবে। আজ থেকে ১৫/১৬ বছর আগে হেমায়েত খান নামে আমি আমার গ্রামের এক স্বল্প শিক্ষিত যুবককে চিনতাম যে তার বাবার চিকিৎসার জন্য তার বাপদাদার ভিটার শেষ জমিটুকুও বিক্রি করে দেয় কিন্তু তারপর সে তার বাবাকে বাঁচাতে পারেনি ……. ঘরবাড়িহারা হয়ে সে অবশেষে ঢাকার টংগিতে একটি বড় বিদেশি কারখানায় শ্রমিকের চাকুরি পায় এবং ৩/৪ বছরের মধ্যেই তার ভাগ্য ফিরে যায়। আমার কাছে একদিন সে এসে অনুরোধ করে আমি যেন তার জমির ক্রেতাকে অনুরোধ করি যেন সে তার বাপদাদার ১ কাঠা জমি অন্তত ফিরিয়ে দেয়, বিনিময়ে সে বাজার দরের ৫ গুন দাম দিতেও রাজি আছে….. আমি তার পক্ষে অনেক চেস্টা করি কিন্তু ঐ পক্ষকে রাজি করাতে পারিনি……..ওই দামে সে অন্য জায়গায় ৬/৭ কাঠা জমি কিনতে পারতো কিন্তু তা সে কেনে নাই। আমার আজও মনে আছে হেমায়েত খান বাপদাদার ১ কাঠা জমি ফিরে পেতে ব্যার্থ হয়ে বাড়ির উঠানে দাড়িয়ে উন্মাদের মতো চিৎকার করে কেঁদেছিল আর বলেছিল অন্তত তার কবরের জায়গাটা যেন তাকে দেয়া হয়, আমি অনেক চেস্টা করেও তাকে সাহায্য করতে পারিনি……..অভিমানে হেমায়েত গ্রামে আসা বন্ধ করে দেয়, গত বছর হেমায়েত মারা যায়…..তার কবর হয়েছে শহরে, তার বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন অনেক বড় চাকুরী করে, এখন তারা সবাই নগরবাসী। হেমায়েতের এক ভাই এখন সাউথ আফ্রিকা অন্য ভাই দুবাই থাকে……. মাঝে মাঝে তারা আমাকে ফোন করে……. ফোনে কথাবার্তা যতটুকু বলে তার চেয়ে অস্পষ্ট কান্নার শব্দ পাই অনেক বেশি , বিষয় সেই একই, তার বাপদাদার ভিটার হারানোর বেদনা, আমি বেশির ভাগ সময়ই তেমন জুতসই কোন উত্তর দিতে পারিনা।

যা হোক বিষয়ে ফিরে আসি, বর্তমান হালিম হাওলাদারের ঘর বলতে যে বস্তুটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে তা বানানো হয়েছিল প্রায় ১৬/১৭ বছর আগে ( এখানে ঘরের যে ছবিটি দেয়া হয়েছে তা ২০১৯ সালের মার্চ মাসে তুলেছিলাম, ছবির এই বৃদ্ধ মানুষটিই কালামের বৃদ্ধ পিতা হালিম হাওলাদার )। ঘরের চালে অগুনিত ছোট বড় ছিদ্র, বর্ষার রাতে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঘরের মধ্যে নিরাপদ শুকনো জায়গা খুজতে খুজতে তাদের বিনিদ্র রাত কেটে যায় কিন্তু অনেক চেস্টা করেও নিরাপদ জায়গা তারা খুজে পায় না।তাদের ঘরে কোন খাট নাই, মাটির মেঝেতে হোগলা পেতে তারা সবাই ঘুমায়। তাদের ঘরের মধ্যে কোন আলাদা রুমও নাই, একটাই বড় ঘর ,সেখানে সবাই জরাজরি গাদাগাদি করে থাকে। ঘরের দেয়ালে কমদামি চম্বল / রেন্ডি কাঠের এলোমেলো ভাংগা, আধা ভাংগা তক্তা লাগানো, তবে হোগলার বেড়ার না, এতে বোঝা যায় ১৭ বছর আগে ঘরটি যখন বানানো হয়েছিল তখন তার অবস্থা অন্তত হোগলাপাতার মতো নিম্নস্তরের ছিল না।ঘরের দরোজা জানালার পাল্লা বলতে যা আছে তা খোলা আর বন্ধ থাকা প্রায় একই কথা।ঘরের সাথে একাকার হয়ে আছে তার পোষা কবুতরের খুপরি। একটা জিনিস কিন্তু লক্ষ্যনীয় যে ঘর যতই জরাজীর্ণ হোক না কেন তার ঘরে কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ আছে। ১৭ বন্দো ছোট্ট ভাংগা ঘরটি দক্ষিনমু্খী ,কিন্তু দক্ষিনে অনেক গাছ গাছরা তাই সে চায় কোনদিন তার যদি নতুন ঘর হয় তা সে বানাবে উঠানের দিকে মুখ করে তাতে তার ঘরটি হবে পশ্চিমমুখী…… আমি বল্লাম পশ্চিমমুখী ঘরতো সবচেয়ে খারাপ ঘর……সে বললো পশ্চিমে উঠানের দিকে মুখ করা ঘর তার জন্য বেশি কাঙ্খিত কেননা ১৫ হাত বিপরীতেই তার বাবার ঘর ,তাদের বাড়িতে কোন নিজস্ব পুকুর নাই , ১৫/২০ হাত দূরেই উদয়কাঠি খাল, এই খালেই তাদের রান্নাবান্নার কাজ ও পুরুষ মহিলা সবার গোসল সারতে হয়, তবে পৌষ মাঘ মাসে খাল শুকিয়ে গেলে কিছুদিন পানির সমস্যা হয় । ঘর থেকে ৬/৭ হাত দূরেই এনজিওদের দেয়া ৫ রিংয়ের শৌচাগার । শ্রাবন,ভাদ্র মাসে ‘ জোগার ‘ সময় জোয়ারের পানি এসে কখনো কখনো উঠান প্রায় ২’ / ২.৫’ ডুবিয়ে দেয় (প্রতি পূর্নিমা আর আমাবস্যার সময় কয়েকদিন জোয়ারের পানি অনেক বাড়ে এই সময়টাকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘ জোগা ‘ ) তাই ঘরের মাটির পোতা ৩’ উঁচু। একসময় এই খালটি অনেক বড় ছিল, কালিগঙ্গা নদী থেকে বিশাল বিশাল নৌকা ধান,চাল,কাঠ বা মানুষ নিয়ে এই খালে চলাচল করতো, এখন খালটি প্রায় অর্ধমৃত কেননা বেশির ভাগ চলাচলই হয় গ্রামের ইউনিয়ন কাউন্সিল বা LGED এর সড়ক পথে।

একটা জিনিস বলে রাখি, যা আগের লেখায়গুলোয় বলিনি……. ঘরের বাইরের দেয়াল থেকে পোতা প্রায় ২’ থেকে ২.৫’ বাড়ানো থাকে, এই বাড়ানো পোতার অংশকে ডওয়া বলে। এখানে ইচ্ছা করলে উঠানের দিকে মুখ করে পা ঝুলিয়ে বসা যায়। এই ঘরটির উঠানের দিকের পোতা প্রায় ২’ প্রশস্ত ডওয়া যুক্ত।

চরম দরিদ্র ভূমিহীন কালামের কোন নির্দিষ্ট পেশা নেই…… কখনো নিকটস্থ দাউদপুর হাটে ডাব বিক্রি করে,কখনো ভ্যান চালায়, কখনো মাছ ধরে, কখনো শ্রেফ উদয়াস্ত মাটি কাটার ঘামঝরা চুক্তিবদ্ধ কামলা। সামাজিক বিবর্তনের ধারায় প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই একটা শ্রেনীকে দাস বানিয়ে রাখে……মাত্র কয়েকশো বছর আগেও দেশে দেশে দাসপ্রথা খুব উদগ্রভাবে ভাবে সুস্পষ্ট ও আইনানুগভাবে অনুমোদিত বিষয় ছিল, তবে এখন এটা একটু অস্পষ্ট ভাবে সুগারকোটেড অবস্থায় বিরাজ করছে……….. শোষণ নির্ভর আর্থসামাজিক কাঠামোতে এক শ্রেনীকে দাস হিসেবে থাকতেই হবে, যাদের উৎপাদন ব্যবস্থার উপর কোন দখল থাকবেনা কিন্তু তারা নিরন্তর উৎপাদনের চাকা ঘুরিয়ে যাবে……. মোদ্দা কথা, আমাদের আলোচ্য কালাম হাওলাদার হলো আমাদের এই সময়ের সেই ‘ দাস শ্রেনীর ‘ একজন অসহায় অভিযোগহীন প্রায় নির্বোধ মানুষ । দাসদের যেমন অধিকারবোধের স্নায়ু ভোতা করে দেয়া হয় কালাম শেখেরও ঠিক তেমন…… জগতের কাছে তার তেমন কোন সোচ্চার অভিযোগ নাই, জোড়ালো কোন দাবি দাওয়া, চাওয়া পাওয়াও নাই….. তবে সলজ্জ কিছু চাওয়া আছে যদি কেউ দয়া করে দেয়…… সেই ‘ চাওয়ার ‘ তালিকায় একদম প্রথমেই আছে তার পুত্র,কন্যা,স্ত্রীর জন্য একটা কোন রকমের ছোট্ট উঠানমুখী শক্ত ঘর যার চাল থেকে পানি পড়ে না, যে ঘর পৌষ, মাঘ মাসের প্রবল হাড়কাঁপানো ‘ উত্রা বাতাস ‘ থেকে তার ছোট ছোট সন্তানদের শীতের কস্ট থেকে রক্ষা করবে……..এক মানব জীবনে তার সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন আর সবচেয়ে বড় চাওয়া এটুকুই……. কেননা নির্বোধ হলেও সে ভাল করেই জানে এদেশের অধিপতি শ্রেনী গুলশান, বনানী, উত্তরা, পূর্বাচলে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এলিট শ্রেণীর জন্য ৫ কোটি টাকার জমি ৫ লাখ টাকায় বিতরন করবে কিন্তু গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের আবাসন নিয়ে মোটেও চিন্তা করবে না।……

পূর্বের পর্ব 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *