খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

চেতনার উন্মেষ – খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

চেতনার উন্মেষ – খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

‘ভাষা আন্দোলন’ বাঙালীর মুখের ভাষা ধরে রাখার লড়াই। এমনটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ভাষা আন্দোলনের স্বরুপ এবং এর পরবর্তী বিস্তার সুদুর প্রসারী ও বহুমাত্রিক। ৫২’র ফেব্রুয়ারীতে ঢাকার রাজপথে যে রক্ত ঝরেছিল, সে রক্ত ঝরা পথেই প্রোথিত হয় এক দীপ্ত চেতনার বীজ; বাঙালী জাতির সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাসের আতুরগৃহে ফলে-পুস্পে-পত্রপল্লবে বিকশিত হয়ে সেটিই পরিনত হয় বিশাল মহীরূহে: আমাদের স্বাধীনতায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারঃ নকশার মূলভাব

তাই ভাষা আন্দোলন শুধু শোকের স্মৃতি নয়, অধিকন্ত শোকাবহ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিকশিত একটি জাতির নিজেকে খুঁজে পাবার ইতিহাস। তাই শোক নয়, শোক হতে উৎসারিত “চেতনার উন্মেষ”খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল প্রতিপাদ্য।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

স্থাপত্য শিল্পকে ইতিহাসের কংকাল বলা হয়ে থাকে। তাই স্বল্প পরিসরে, ক্ষুদ্র প্রয়াসে দূর্লভ কিছু সময়ের সমষ্টি এবং এর অন্তর্হিত চেতনাকে স্থাপতিক আবহে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে কিছু পরিশুদ্ধ আঙ্গিক ও তার পরিশীলিত ভাষায় ব্যবহারে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার : ত্রি-মাত্রিক ছবি

ভাষা আন্দোলনের চুড়ান্ত প্রাপ্তি একটি দীপ্ত জাতীয় চেতনা। চেতনা অবিনশ্বর; অনির্বাণ তার শিখা। চেতনার এই চিরন্তর ও পরিশুদ্ধ রুপটিকে প্রকাশ করা হয়েছে একটি বিশুদ্ধ আকৃতি “ঘনক” এর মধ্য দিয়ে। একটি সুউচ্চ লম্বতল প্রকাশ করছে আমাদের মহান প্রাপ্তিকে। এই গৌরবময় প্রাপ্তি গগণচুম্বী হয়ে ধারণ করছে এক ভাস্বর নক্ষত্র— “আমাদের চেতনা”কে।

আমাদের চেতনা, আমাদের বিশ্বাস অঙ্গাঅঙ্গিভাবে মিশে আছে এই মাটিতে, এই সত্তায়; সত্তার গভীরে প্রোথিত— শহীদদের আত্নত্যাগের শোকগাঁথা। বর্গাকার ও বৃত্তাকার অংশের পূণর্মিলনে সৃষ্টি একটি তল ঘনকটিকে বেষ্টন করে এর গুরুত্বকে বর্ধিত করছে। উপরোক্ত তলটি আমাদের সমৃদ্ধ জাতিসত্তার রুপক, যেটি চেতনাকে বেষ্টন করে আছে; বক্ষে ধারন করে আছে চেতনার অনির্বান  সত্তা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

অতীতের প্রগাঢ় আহবান বাধ্য করেছিল বায়ান্নর এই অগ্নিঝরা পথে পা বাড়াতে, অতীত দিয়েছিল প্রেরনা। পূর্বপুরুষের ইতিহাস আমাদের বারবার চালিত করে অধিকার আদায়ের মিছিলে। আমাদের  গৌরবমন্ডিত অতীতকে প্রতীকিরূপ দান করা হয়েছে পিছনের একটি আয়তাকার তল দিয়ে।

তাহ শহীদ মিনার শুধু স্মৃতির স্তম্ভ নয় বরং একটি শোকাবহ ঘটনা থেকে উৎসারিত আমাদের জাতীয়তাবোধ, স্বাতন্ত্রসত্তা; আমাদের গৌরবের অমরগাঁথা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারঃ নির্মাণকালীন চিত্র

১৯৯৭ সালে আহবাণকৃত উন্মুক্ত নক্শা প্রতিযোগিতায়  “শহীদ মিনার নক্শা প্রণয়ন কমিটি” খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েল স্থাপত্য অনুষদের ৫ম ব্যাচের চারজন ছাত্র কতৃর্ক প্রস্তাবিত “চেতনার উন্মেষ” শীর্ষক নক্শাটি মনোয়ন করেন। উলে­খ্য, প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহনকারী শিল্পী, ভাস্কর ও স্থপতিবৃন্দের মধ্যে থেকে প্রথম স্থান অধিকারী “চেতনার উন্মেষ” শীর্ষক নক্শাটি ছাড়াও ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীকে সংশি­ষ্ট কতৃর্পক্ষ পুরস্কৃত করেন। মনোনীত নক্শাটির নক্শাকারবৃন্দ হলেন

  • মিজানুর রহমান,
    তপন কুমার ধর,
    মুহাইমিন শাহরিয়ার,
    আহসান হাবিব

মনোনীত নক্শাটির কাঠামোগত নক্শা প্রস্ততে সাহায্য করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান “শহীদুাল্লাহ এসোসিয়েটস”। প্রকল্পটি প্রাকল্পিত ব্যয় প্রায় বিশ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে প্রথম কিস্তিতে মূল মিনারের নির্মাণ ব্যয় আনুমনিক সাড়ে সাত লক্ষ টাকা।

তৎকালীন উপাচার্য মহোদয় ড. এস. এম. নজরুল ইসলাম  ২১শে ফেব্র“য়ারী’ ১৯৯৯  সনে পুস্পার্ঘ নিবেদনের মধ্য দিয় এই শহীদ মিনারের মূল কাঠামোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষিত হয়। দীর্আঘ দিন অতিবাহিত হলেও সাংস্কৃতিক প্লাজাসহ ল্যান্ডস্কেপের আবশিষ্ট কাজ আজও শেষ হয়নি।

— —- —- —-  —

আরো প্রকল্প