আটটি মনোভাব যা স্থপতি হিসেবে আপনার সফলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আটটি মনোভাব যা স্থপতি হিসেবে আপনার সফলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
[Author: Architect Muhaimin Shahriar, Founder, Arch-Bangla.Com]
বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জিং পেশাসমুহের মধ্যে স্থাপত্যচর্চা অন্যতম। স্থপতি হিসেবে অন্যান্য পেশার মতো এ পেশাতেও অগ্রসরতার ক্ষেত্রে বাধা আসতে পারে বা ভুল হতে পারে। বাধা বা ভুল কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই সার্বিকভাবে কাম্য। বস্তুত ব্যর্থতাই শেষ কথা নয়। কথায় আছে-
“ ব্যর্থতা আসলে সফলতার বিপরীতার্থক নয়, বরং ব্যর্থতা সফলতারই অংশমাত্র।”
স্থাপত্যের মতো সৃজনশীল পেশাতে কে কখন সফল হবে সেটা বলা দুরূহ ব্যাপার। দেখা যায় ডিজাইন স্কুলে ডিজাইনে ভাল করা অনেক ছাত্রই কর্মজীবনে এসে বাধাগ্রস্থ হয়। আবার অনেক মধ্যম মানের ডিজাইনার পেশাক্ষেত্রে অনেকের চেয়ে সামনে এগিয়ে যায়। স্থাপত্য চর্চার সময় স্থপতিদের ক্যারিয়ার গড়ার পথে কমবেশি নানা-ধরনের আচরন প্রকাশ পায়। তাকে Client Dealings এবং ডিজাইন করার সময় নানা ধরনের আবেগ ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সাধারনভাবে বিভিন্ন জরীপে দেখা যায় স্থপতির জীবনে আটটি মনোভাব এড়িয়ে চললে স্থাপত্যচর্চার ক্যারিয়ার আরও সাবলীল করা সম্ভব।
১. স্থপতি হিসেবে আমি যথেষ্ট শিখে ফেলেছি-
এই মনোভাব আপনার জন্য ক্ষতিকর। সব সময় নতুন বিষয় জানার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বই বা প্রবন্ধ পড়ার মাধ্যমে নিজেকে হালনাগাদ রাখুন। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ, প্রদর্শনী ও ভবন পরিদর্শনের মাধ্যমে স্থাপত্যের নতুন নতুন বিষয় জানার চেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। প্রতিনিয়ত নিজের সৃজনশীলতা পর্যালোচনা করুন এবং নিজের ও অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করুন।
বিশ্ব বিখ্যাত স্থপতি ফ্রাংক লয়েড রাইট বলেছেন-
”যখন কেউ নিজেই নিজের কর্তা বনে যায়, তখন তার আত্ম-উন্নয়নের পরিসমাপ্তি সেখানেই ঘটে।”
২. ডিজাইন আগে, Context পরে-
যেকোনো ভবনের নকশা করার সময় তার পারিপার্শ্বিকতা অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। যেই অঞ্চলে বা শহরে বা পরিবেশে স্থাপনাটি নির্মিত হতে যাচ্ছে তাঁর পরিবেশ ও স্থানকে বিবেচনায় না নিয়ে সফল ব্যবহারযোগ্য স্থাপত্য আশা করা দুরূহ। অন্যদিকে ভবনটি ডিজাইন প্রক্রিয়ার সময় 3D rendering এর জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামের সাহায্যে আকর্ষনীয় environment তৈরি করতে গিয়ে সেটা যেন পারিপার্শিকতার সাথে অসামঞ্জস্য হয়ে না যায় সে দিকে নজর দেয়া জরুরী। কারন Rendering Software এ ডিজাইনকৃত বিল্ডিং এর পাশে বাস্তব প্রেক্ষাপটের পরিবেশ অনুপস্থিত থাকে। তাই খেয়াল রাখতে হবে পারিপার্শ্বিকতা যেন উপেক্ষিত না হয়। এ ব্যাপারে উদাসীন হলে আপনার স্থাপত্যটি হারাতে পারে গ্রহণযোগ্যতা।
৩.অজানার প্রতি ভীতি-
আপনি কি নতুন বিষয় সম্পর্কে ভীত অথবা চিন্তিত? আপনার নতুন ডিজাইনের সমাধান কিভাবে করবেন ভাবছেন? আপনি কি আপনার কল্পনা গুলোকে ড্রইং বা কাগজে রূপান্তর করতে ভয় পাচ্ছেন অথবা আপনি জানেন না এর সমাধান কিভাবে? আসলে ভিন্নধর্মী কোন ডিজাইন Trial & Error Basis-এ পরীক্ষামূলকভাবে একবার সমাধান না করলে বোঝা যাবে না কিভাবে এটা সম্ভব। ড্রাফটিং, ড্রাফটিং এবং ড্রাফটিং অর্থাৎ বারংবার বিভিন্ন অপশন চেষ্টা করার মাধ্যমে যেকোন ডিজাইনের জটিলতা ও সম্ভাবনাসমূহ বের হয়ে আসে। ক্রমাগত অপশন নিয়ে চিন্তা করা এবং এই অপশন গুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা কিন্তু বাস্তবে প্রাপ্তির খাতায় বা অটোক্যাডে কোন আউটপুট না আনা আপনার সফলতার সম্ভাবনাকে আরও দুর্বল করে দিবে। সুতরাং কল্পনাগুলোকে দ্রুত বাস্তবে রূপ দেয়া হবে কার্যকরী পদক্ষেপ।
৪. অন্যরা কিছু জানেনা-
এই ধরনের মনোভাব থেকেও দূরে থাকুন। আপনার কাজ সব সময় প্রশংসিত হবে ব্যাপারটা এমন নয়। আপনার বস, ক্লায়েন্ট বা সহকর্মী আপনার কাজের নেতিবাচক সমালোচনা করার অর্থ এই নয় যে তারা ভুল বলছে বরং ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং ভুল থাকলে সংশোধন করুন। আপনি গোঁ ধরে বসে থাকলে আপনার প্রতিযোগীদের থেকে আপনার পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
৫. স্থপতি হিসেবে উদ্যোক্তা সম্পন্ন মনোভাবের অনুপস্থিতি-
যদি আপনার মনোভাব থাকে যে আমি স্থপতি হতে চেয়েছি এবং আমি শুধু দৃষ্টিনন্দন ভবন তৈরি করব তাহলে ভুল করছেন। একজন স্থপতি একাধারে স্থপতি, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। প্রতিনিয়ত উদ্যোক্তা সম্পন্ন মনোভাব আপনাকে স্থপতি হিসেবে সামনের দিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৬. ডিজাইন এর জন্য ডিজাইন করা-
যদি আপনি শুধু ডিজাইন করার জন্য ডিজাইন করেন তবে এর উপজীব্যতা হারাবে। আপনি কি এমন কিছু বিল্ডিং দেখেছেন যেগুলি কেবল মানুষের ব্যবহারের যথার্থতার পরিবর্তে কোনও আইডিয়া প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে? ডিজাইন স্কুলগুলো আমাদেরকে সৃজনশীল হতে উৎসাহ দেয় আমাদের সৃজনশীলতার সীমা পরীক্ষা করার জন্য। আমরা লক্ষ্য করলে দেখব পেশাগত পরিবেশ কিছুটা ভিন্ন।
যদি স্থাপত্যে কোন পুরষ্কার প্রদানের সময় এর উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যায় জুরী কমিটি যেটা বিবেচনায় নেয় তা হলো, “এমন একজন স্থপতি বা স্থপতিদের স্থাপত্যকর্ম যার নির্মিত কাজ প্রতিভা, অন্তরদৃষ্টি এবং প্রতিশ্রুতির সেই গুনাবলীর সংমিশ্রণ প্রদর্শন করে, যা শিল্পের মাধ্যমে মনুষ্যত্ব এবং নির্মিত পরিবেশে ধারাবাহিক এবং উল্লেখযোগ্য অবদান তৈরি করেছে”। অথচ এ বিষয়টি প্রায়শই অনুসরণ করা হয় না।
আমরা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কিছু স্থাপত্যের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো আবাসন সংকটজনিত কারণে ফ্রান্সে সে সময় বেশ কিছু আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছিল যা ছিল শুধু Design করার জন্য Design. যা পরে পরিত্যক্ত হয়েছিল। যেমন Aillaud Towers, Nanterre Paris.
৭. ব্যবহার উপযোগীতা উপেক্ষা করা
যেকোনো স্থাপত্যকর্মের লক্ষ্য থাকে ব্যবহারকারীর জীবনমানের উন্নয়ন সাধন করা ও তাকে উচ্চতর পরিবেশ নিশ্চিত করা। আপনার সৃজনশীলতা এমনভাবে বিষয়টিকে নিশ্চিত করবে যেন প্রকল্পটির ব্যবহারবান্ধবতা বিনষ্ট না হয়। ডিজাইনের সময় নিশ্চিত করতে হবে যেন এর ব্যবহারকারী এর যথার্থ ব্যবহার করতে পারে। নতুবা Creative Space পরিণত হতে পারে Negative Space-এ। যেমনঃ Pruitt–Igoe, urban housing projects, St. Louis, Missouri, USA প্রকল্পটি পরবর্তিতে ভেঙ্গে ফেলতে হয়েছিল।
৮. স্থপতি হিসেবে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলা
সব সময় আপনি সক্রিয় থাকতে পারবেন তেমনটি নাও হতে পারে। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে সক্রিয়ভাবে আপনার সৃজনশীলতা বা ডিজাইন মানদণ্ড অনুযায়ী হচ্ছে না; তবে একটি বিরতি নিন। নিজের দিকে তাকান। নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে আবার শুরু করুন। ধৈর্য হারানো চলবে না।সর্বোপরি ব্যর্থতা আসুক বা না আসুক এসব বিষয়কে বিবেচনায় রাখতে হবে এবং একইসাথে নিজের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্থাপত্য চর্চার পথকে সুগম করে এগিয়ে যেতে হবে।
[ লেখকঃ স্থপতি মুহাইমিন শাহরিয়ার, প্রধান স্থপতি, ডিকন্সট্রাকশন আর্কিটেক্টস
* বিদেশী আর্টিকেল থেকে সাহায্য নেয়া হয়েছে]
আরও পড়তে পারেন আমরা যখন স্থাপত্যে পড়তাম
মুল্যবান অনেক ডিরেকশন পাওয়া গেলো… ধন্যবাদ
মনোভাব ৯ঃ ফ্রি ডিজাইন করে দেয়ার মানষিকতা না থাকা।
Well guided