প্রস্তাবিত ড্যাপ ২০১৬-২০৩৫, জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য এলাকা ঘনত্ব কমানো, নিচু ভবন নির্মাণের প্রস্তাব এবং বসবাস উপযোগী আগামীর ঢাকা।
প্রস্তাবিত ড্যাপ ২০১৬-২০৩৫, জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য এলাকা ঘনত্ব কমানো, নিচু ভবন নির্মাণের প্রস্তাব এবং বসবাস উপযোগী আগামীর ঢাকা।
লেখকঃ স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, প্রধান স্থপতি (অবঃ), স্থাপত্য অধিদপ্তর, ঢাকা, বাংলাদেশ
ঢাকা মহানগরীর বর্তমান জনঘনত্ব কমিয়ে এবং নিয়ন্ত্রণে রেখে ঢাকাকে বসবাস উপযোগীতার জন্য একটি মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ড্যাপ ২০১৬-২০৩৫ Detail Area Plan DAP 2016-2035 এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে.
- প্রস্তাবে রাস্তার প্রশস্ততা অনুযায়ী প্রচলিত FAR এর মান কমানো হয়েছে,
- ওয়ার্ড ভিত্তিক এফ.এ.আর এর মান নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব এসেছে( চারটি এলাকা বাদে অন্যত্র এ মান খুবই কম )
- জনঘনত্বের নিয়ন্ত্রণে প্রতি ওয়ার্ডে কাঠা প্রতি এপার্টমেন্ট ইউনিট নির্মাণের মাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।
- এলাকাভিত্তিক এফ.এ.আর এর মান কমিয়ে নিচু বা মাঝারি আবাসিক ভবন বানানোর জন্য প্রস্তাব এসেছে।
- আবার যেখানে এলাকার FAR এর মান বেশি সেখানে রাস্তার এফ.এ.আর মান কম থাকার জন্য ওই সর্বোচ্চ FAR-এর মান ব্যবহার সম্ভব নয়।
- মানুষকে ঢাকাতে আসতে আর দিবোনা এই চিন্তায় একটি খর্বাকৃতি মহানগরীর ধারণা মাথায় নিয়ে ড্যাপ প্রণীত হয়েছে।
প্রশস্থ রাস্তা যেমন ৬০ ফুট কিংবা ৮০ ফুট মাপের রাস্তার পাশে যে এফ.এ.আর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ওয়ার্ড ভিত্তিক এফ.এ.আর ও প্রণোদনা মিলেও অনেক ক্ষেত্রেই সে এফ.এ.আর এর মান প্রাপ্তি কোনোভাবেই সম্ভবপর হবেনা। মানুষ কেন ঢাকায় আসে? ড্যাপ এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী বছরে পাঁচলক্ষ জন ঢাকাতে মাইগ্রেট করেন। কেন করছেন সে চিন্তায় না গিয়ে,তার উৎস ধরে নির্মূলের ব্যবস্থা না করে ঢাকাতে কম ভবন কম মানুষ এমন একটি অদ্ভুত ও কার্যকর নয় থিওরি অনুসরণ পূর্বক ড্যাপে উঁচু ভবন নির্মাণ নির্মূলের জন্য প্রস্তাব আসলো। খুব ভালো,তাত্ত্বিকতার কোনো চিন্তাতে এমন অনেক কিছু আসতেই পারে! তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করে প্রণেতারা জানালেন কোনো মহানগরের ক্ষেত্রে জনসংখা একর প্রতি হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ১২০ জন,তাহলে এতদিনের সরকারি গেজেটের যে তথ্য ছিল একরপ্রতি ৩৫০ জন,তাহলে সে তথ্য ভুল। কারা সে তথ্যাবলী,কোন বিশ্লেষণে এতদিন ধরে আমাদের দিয়ে আসছেন? আরো একটি বিষয় বুঝছিনা, সরকারিভাবে যখন প্রতি একরে ৩৫০ জন বলা হচ্ছে তখন প্রতি ফ্যামিলিতে পাঁচজন মানুষ ধরে একরে ফ্যামিলি সংখ্যা ৭০। ফ্যামিলি জনসংখা এখন নাকি গড়ে ৪ তাহলেতো একরে প্রায় ৮৭ ফ্যামিলিকে গেজেট অনুযায়ী সংস্থান সম্ভব। তাহলে জনসংখা না ধরে একরে ৭০ ফ্যামিলি চিন্তায় আসলে ঢাকার জনসংখা এমনিতে কমছে! সার্ভে অনুযায়ী ঢাকার জনসংখা ৬৩ শতাংশ এলাকাতে প্রতি একরে ৩০০ জনের অধিক আর ৪০ শতাংশ এলাকাতে ৪০০ জনের অধিক। আমাদের বংশাল,লালবাগ,গেন্ডারিয়া এবং সবুজবাগ এলাকায় একর প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষ বাস করেন! তাহলে এসকল এলাকার উন্নয়নের জন্য,আমাদের মহানগরীকে বসবাস এর উপযোগিতা দেওয়ার জন্য একরে ১২০ জন না পারলেও প্রতি একরে ২০০ জনে আনতেই হবে,ড্যাপের গেজেটের পরে আসবেই এমন একটি ভাবনা। তাহলে উপরে যে চারটি এলাকার কথা বলা হলো সে এলাকা যেহেতু মহানগর এর অংশ তাহলে এ ড্যাপ গেজেট হওয়ার পরে বসবাস উপযোগিতার জন্য ওই এলাকার জনগণকে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে? কোথায় যাবেন তারা,ঢাকা মহানগরীর অন্য কোনো অংশতে, যদি হয় তবে সেটা কোন এলাকা? আর যদি মহানগরের বাইরে বের করে দিতে হয় কাদের বের করবেন? মানদণ্ড কি হবে মানুষ বের করে দেয়ার? আগে যারা এসেছেন তারা বের হবেন,না পরে যারা এসেছেন তারা আগে বের হবেন? যদি বলেন তাদের তো বের হতে বলছিনা তারা ওখানেই থাকবেন আর ড্যাপের চিন্তা অনুযায়ী এখন থেকে ওখানে আর অধিক ঘরবাড়ি বানাতে দিবেন না,তাহলে ওই এলাকাসমূহ বসবাস এর মানদণ্ডের নিচেইতো থাকলো এবং মানবেতর অবস্থায়ই মানুষ থাকলো।
ঢাকাতে লোকজন কেন আসেন সেটা খুঁজুন,সে সমস্যা সমাধান এর চেষ্টা করলে,সমাধানের পথ খুঁজলে ঢাকাতে লোকজন আসা বন্ধ হবে,আর যদি সেটা না হয় তবে আজ থেকে আর একটিও ভবন নির্মাণের অনুমোদন না দিলেও ভবন আর না বানালেও ঢাকাতে লোকজন আসবেই এবং ড্যাপ তখন ড্যাপের মতোই দুই মলাটে আবদ্ধ থাকবে আর মানুষ তার জীবন ও জীবিকার জন্য, কর্মের কাছে থাকার জন্য নিয়ম না মেনে অনিয়মের বেড়াজালে নিজেকে চলমান রাখবেন অথবা কর্তৃপক্ষের ত্রিসীমানায় ভবন নির্মাণের অনুমোদনের জন্য না গিয়ে সাবলেট ও বস্তির সংখ্যা বাড়াবে, ঘিঞ্জি বস্তিতে অধিক মানবেতরভাবে আগামীতে মানুষ জীবন যাপন করবেন।