প্রাচীন জলদুর্গের সন্ধানে :: গবেষণামূলক প্রকল্প (পর্ব-০১)
প্রাচীন জলদুর্গের সন্ধানে :: গবেষণামূলক প্রকল্প (পর্ব-০১)
শাহরিয়ার হাসান মৃধা রাতুল, প্রধান স্থপতি, মৃধা’জ ড্রয়িং হাউজ, নারায়ণগঞ্জ
পূর্বভাষ::প্রাচীন জলদুর্গের সন্ধানে
প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আকর হলো এক একটি জলদুর্গ। একটি নয়, দুটি নয়,তিন তিনটি জলদুর্গের কথা বলছি। ইট পাথরের কাব্যে রচিত এই দুর্গ স্থাপনা আমাদেরকে মুঘলদের কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় – মুঘলদের পরাক্রমশীলতা, সাহসিকতা, সৃজনশীলতা ও মননশীলতার। প্রাচীন জলদুর্গের সন্ধানে এই গবেষণামূলক লেখার অবতারনা করলাম।
মুঘল আমলে যে জলদুর্গ স্থাপনা গড়ে উঠেছিল তা আজো টিকে রয়েছে এই বাংলায়। এই বাংলার গহীনে-নির্জনে নিরন্তর তাদের অবস্থান। শহুরে ব্যস্ততামুখর কোলাহল ও হৈ – চৈ থেকে নিজেকে ক্ষণকালের জন্যে আড়াল করে ঘুরে আসতে পারেন যে কেউ। তারপর জলদুর্গ স্থাপনায় রচনা করুন নিজের পদচিহ্ন। দুর্গের অভ্যন্তরীণ সবুজ শ্যামলিমা থেকে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস গ্রহণ করে জীবন কে সঞ্জীবনী করে তুলুন।
এপার বাংলা ও ওপার বাংলা নিয়ে আমাদের দুই বাংলা। এই দুই বাংলা এক সময় এক ছিল। যদিও দেশ, কাল, সময় ও পরিস্থিতির চাপে পরে দুই বাংলা পৃথক। তবুও ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংষ্কৃতি ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে তারা পৃথক নয়। সর্বোপরি মনের দিক থেকে একটা আকর্ষণীয় মিল রয়েছে। যেমন মিল দেখা যায় তাদের আন্তরিকতায় তেমনি স্থাপনায়। সমগ্র বাংলা জুড়ে বহু প্রাচীন নিদর্শণ ও স্থাপনা রয়েছে যা এখনো বহু মানুষের অন্তর্ধাম রহস্যের কেন্দ্র বিন্দু। এখনো এসব স্থাপনা টিকে রয়েছে। টিকে
রয়েছে, বহু কালের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে। মনুষ্য সৃষ্ট কারণ ও প্রকৃতিগত কারণ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। তাইতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এখনো সেই সব প্রাগৈতিহাসিক স্থাপনা।
এসব স্থাপনা কে ঘিরে রয়েছে নানা কথকথা। বহুল জনশ্রুতি। কেউ কেউ ইতিহাস, ঐতিহ্য কে প্রাধান্য দিচ্ছে, আবার কেউবা সামাজিকতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ গল্পের ঝুলি থেকে গল্প বের করে জুড়ে দিচ্ছে তার ইতিহাসের সাথে। আর সেই থেকে এক একটি ঐতিহাসিক স্থাপনাকে নিয়ে তৈরী হচ্ছে বহুল জনশ্রুতি। জনশ্রুতি থাকুক আর নাই থাকুক তবুও এই এক-একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের সম্পদ। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও চেতনাবোধ। যা সদাজাগ্রত রয়েছে, জাগ্রত থাকবে বহুকাল এই প্রত্যাশা।
জলদুর্গ কী ?
জলদুর্গ বলতে জল ও দুর্গের সম্পর্ক স্থাপন বা, সমাহারকে বোঝায়।
অর্থাৎ, জল+দুর্গ=জলদুর্গ
দুর্গের অবস্থান সরাসরি জলের উপরে অর্থাৎ, জল সংলগ্ন স্থানে অথবা, জলের নিকটবর্তী স্থানে বা, তীরে অবস্থিত স্থাপনা। জল বলতে বিশাল পানির আঁধারকে বোঝায়। সেক্ষেত্রে দেশ বিবেচনায় সে স্থান হবে নদী বা নদ। নদী বা, নদ সংলগ্ন স্থানে বা তীরে অবস্থিত দুর্গই জলদুর্গ।
কোন কোন বিবেচনায় জল সংলগ্ন দ্বীপে অবস্থিত দুর্গ’ই জলদুর্গ। সর্বোপরি, জলদুর্গ সমেত এলাকা হবে একটি “নৌ-নিয়ন্ত্রণ এলাকা” বা,”নৌ নিয়ন্ত্রণ ফাড়ি”। এপার বাংলায় রাজধানী ঢাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এই জলদুর্গের উৎপত্তি ও সূচনা। সেই সময়ের পার্সপেক্টিভ এ এই ধরণের পরিকল্পনা ও প্রয়োগ একটি আশ্চর্যজনক অধ্যায় বৈকি কিছুই না।
জলদুর্গ বলার কারণ
- সরাসরি জলের সাথে সম্পর্কিত।
- নৌ-নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সরাসরি নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্থাপনা।
- একটি সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যার জয় সুনিশ্চিত।
- জ্যামিতিক সরলরৈখিক ব্যবস্থাপনা। যা ক্রমবর্ধমান।
জলদুর্গের কনসেপ্ট
প্রাচীনকালে জলপথে যোগাযোগ বিষয়টা সর্বাপেক্ষা ছিল। জলপথে পথ চলার জন্যে মানুষ বিভিন্ন জলযান ব্যবহার করতো। এসব জলযানের মধ্যে রয়েছে- নৌকা, ছিপ, পানসি, ডিঙ্গি, সপ্তডিঙ্গা নৌ বহর, ময়ূরপঙ্খী নাও, কাঠের মাস্তুলবিশিষ্ট জাহাজ, ছোট-বড় নৌ বহর, পাতাম, নায়রী, রপ্তানি, বাচারী, সাম্পান, লম্বা পদি, তালের নাও কোন্দা, ঘাসি, ইলশা, সওদাগরী, গয়না, কোষা ইত্যাদি হরেক রকমের নৌযান।
দেখা যায় যে, এক দেশের মানুষ আরেক দেশে যেত নৌ পথে। এমনকি কাঠের বড় বড় জাহাজে চড়ে হজ্ব যাত্রীরা এদেশ থেকে পবিত্র মক্কায় যেত হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে। এক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগতো। তবুও জলপথ’ই ছিল ভরসা। কেননা সড়কপথে তখনো অতটা রাস্তাঘাট হয়ে উঠে নি। ছিল যানবাহনের অপ্রতুলতা। আকাশ পথে ভ্রমণের কথাতো চিন্তা’ই করা যায় না।
এদিক দিয়ে জলদস্যুরা এই জলপথে করেই ডাকাতি করতে আসতো। হানা দিতো এক দেশ থেকে আরেক দেশে। তাই দুর্গের মতো বিশাল একটা স্থাপনা যদি নদী সংলগ্ন স্থানে হয় তবে তা বিশাল ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাছাড়া একের অধিক দুর্গ যদি হয় তবে বিষয়টা সপ্ত দরজার মতো হয়ে যায়। রূপকথার গল্পে যেমনটা দেখা যায়। সপ্তদরজা পাড়ি দিলে মনি মূল্যের আকর। তেমনি প্রতি ধাপে ধাপে এক একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। জলপথের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করবে জলদুর্গ।
জলদুর্গ নির্মাণের সময়কাল
মুঘলরা যখন এদেশ শাসন করে তখন এতদ অঞ্চলের সুবাদার ছিলেন মীর জুমলা (১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দ – ১৬৬৩খ্রিষ্টাব্দ। তিনি ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) এর একজন বিশেষ প্রতিনিধি।সুবাদার মীর জুমলা ঢাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় ও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক দুর্গ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
যেহেতু মীর জুমলার শাসনকাল ছিল ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেহেতু এই সময়েই দুর্গসমূহ নির্মাণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। দুর্গ নির্মাণের কাজ অতিশয় দ্রুততর ছিল। কেননা তা হবে সামরিক ফাড়ি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
তবে কোন দুর্গ থেকে শিলালিপি পাওয়া যায় নি। যা থেকে বিস্তারিত কোন তথ্য-উপাত্ত মেলে। দুর্গের বাইরের ও ভিতরের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে মুঘল আমলের স্থাপনা বলে ধরে নেওয়া হয়।
প্রাগৈতিহাসিক শিলালিপি (প্রাচীন জলদুর্গের সন্ধানে)
প্রাচীন স্থাপত্যের পরিচয় প্রদান ও বিশ্লেষণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে স্থাপনা সম্পর্কিত শিলালিপি। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় কোন জলদুর্গে নেই কোন শিলালিপি। শিলালিপি পাওয়া গেলে এই জলদুর্গের সম্পর্কে হয়তো সুস্পষ্ট কিছু ধারণা ও তথ্যাদি পাওয়া যেত। কিন্তু তা আর সম্ভব না। বহু ইতিহাসবেত্তা সোনাকান্দা দুর্গকে মীর জুমলার সময়ে নির্মিত দুর্গ বলে সুস্পষ্টভাবে ধরে নেন। কিন্তু এ সম্পর্কিত কোন দলিল বা নথি নেই। সতেরো শতকের মধ্যভাগে ঢাকা ও তার আসে পাশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় ও মজবুত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে জলদুর্গ পরিকল্পনা নেয়া হয় তারই অংশীদার এই দুর্গ বলে মেনে নেয়া হয়। তাছাড়া স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই জলদুর্গ সমূহকে মুঘল আমলের নিদর্শন বলে মেনে নেয়া হয়।
কোন জলদুর্গই প্রাসাদ দুর্গ নয়
মুঘলরা এই বাংলায় এতগুলো জলদুর্গ নির্মাণ করেন অথচ কোন দুর্গই প্রাসাদ দুর্গ নয়।পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, মুঘলদের হাতে গড়া জলদুর্গ – এক একটি প্রাসাদ দুর্গ। যেমন – লাল কিল্লা,পুরানো কিল্লা,তুঘলকাবাদ দুর্গ,শিরি ফরহাদের দুর্গ,আগ্রা দুর্গ ইত্যাদি। এসব দুর্গ নদী,খাল-বিল ও পরিখা সংলগ্ন। প্রতিটা দুর্গের অভ্যন্তরে বহু স্থাপনা রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের দুর্গের অভ্যন্তরে কোন স্থাপনা নেই। ইদ্রাকপুর ও হাজীগঞ্জ দুর্গের অভ্যন্তরে যে স্থাপনা দেখা যায় তা ঔপনিবেশিক আমলে তৈরী,মুঘল আমলের নয়। শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্যে আমাদের দেশের এই জলদুর্গ। যা সরল রৈখিক পরিধি অনুসরণ করে একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয়েছে আর তা হলো রাজধানী ঢাকা।
জলদুর্গের ইতিহাস (প্রাচীন জলদুর্গের সন্ধানে)
প্রাচীন বাংলার মুঘল আমলের সবচেয়ে আলোচিত স্থাপনা হলো জলদুর্গ স্থাপনা। এই জলদুর্গের কথা চিন্তা করলে সর্ব সম্মুখে চোখের সামনে ভেসে উঠে ধুলোমাখা এক বিশাল প্রান্তর। ঘোড়া ছুটিয়ে, ঘোড়ার খুর দিয়ে বিশাল প্রান্তর দাপিয়ে বেড়ানোর মতো স্থান। এক সময় এসব প্রাচীন স্থাপনা দাপিয়ে বেড়াতো মুঘল রাজা বাদশাহ, তাদের সৈন্য সামন্ত, উজির-নাজির গণ ও প্রজাবৃন্দ। এক একটা জল দুর্গকে ঘিরে রচিত হয়েছিল এক একটা ইতিহাস। ঠিক কল্পনার সেই জগৎ যেন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
একটা সময় ছিল যাকে হার্মাদের কাল (ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দী) বলা হতো। হার্মাদ বলতে, মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের বলা হতো। দুই বাংলাতেই তাদের আগমন ছিল আক্রমনাত্বক ও মারাত্বক। সুলতানি আমলের কিছুকাল আগেই তারা এই বাংলায় আগমন করে।
প্রথম দিকে বণিক হিসেবে তারা বাংলায় আগমন করে। শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও পরবর্তীতে তারা জোর-জবরদস্তি শুরু করে। একটা সময়, এই বণিকেরা দস্যু রূপ ধারণ করে। তখন তাদের ত্রাসে সব জায়গায় একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করতো। ওপার বাংলার হুগলি, গোয়া তে তাদের আক্রমণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে তাদেরকে সেখান থেকে বিতরণ করা হয়। এপার বাংলার ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, সুন্দরবন প্রভূত স্থানে তারা আক্রমণ করে। সুলতানি আমলে তাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও তে তারা অনেক লুণ্ঠন চালায়।
পরবর্তীতে মুঘল আমলে সোনারগাঁও থেকে ঢাকাতে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামে ঢাকার নামকরণ করা হয় “জাহাঙ্গীর নগর”। মুঘলদের ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরের পর জলদস্যুরা ঢাকা আক্রমণ করতো। তারা শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে উত্তরে ডেমরার কাছে চলে আসত। তখন শীতলক্ষ্যা নদীর সাথে বুড়িগঙ্গা হয়ে প্রাচীন দোলাই নদীর একটা সংযোগ ছিল। (বর্তমানে যা ধোলাই খাল সড়ক নামে পরিচিত) এই সংযোগ স্থল ছিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত।
সে সময় বাংলার সুবাদার ছিলেন মীর জুমলা। তিনি জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যে একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। আর সেই পরিকল্পনার ফলপ্রসূ হচ্ছে “জলদুর্গ”।
জলদুর্গ পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য
প্রাচীন এই জলদুর্গ নির্মাণে সুবাদার মীর জুমলার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পটি এমন ভাবে সাজানো হয় যে,
জলদস্যুরা নৌকা যোগে মেঘনা নদী অতিক্রম করে ধলেশ্বরী নদী’র মোহনায় এসে পৌঁছাবে। সে সময় তারা প্রাচীন বিক্রমপুর অতিক্রম করবে।
বিক্রমপুরের ইদ্রাকপুর থেকে ইছামতী নদী অতিক্রমের প্রথম ধাপ থাকবে “ইদ্রাকপুর দুর্গ”। সেই দুর্গ থেকে কামানের গোলা ছাড়া হবে জলদস্যুদের প্রতিহত করার জন্যে।
ইদ্রাকপুর দুর্গ সমেত এলাকা যদি তারা অতিক্রম করতে পারে, তখন তারা প্রবেশ করবে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এ অবস্থায় শীতলক্ষ্যা নদী সমেত “সোনাকান্দা দুর্গ” থেকে কামানের গোলা ছাড়া হবে।
এই ধাপ ও যদি মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুরা আক্রমণ করতে পারে তবে তারা বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রবেশের প্রাক্বালে “খিজিরপুর দুর্গ” থেকে কামানের গোলা ছাড়া হবে। অনেক ইতিহাসবেত্তা এটিকে শেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলে গ্রহণ করেন।
মীরজুমলা ফতুল্লার পুরাতন দাপা তে আরেকটি দুর্গ নির্মাণ করেন। দাপা থেকে অদূরে ছিল তার নির্মিত আরেকটি দুর্গ। এই দুর্গ দুটিতেও পর্যায়ক্রমিক মোকাবিলা করে জলদস্যুদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতো।
এখানে একটা মজার বিষয় হলো যে অনেকটা গেম খেলার মতো, শত্রু পক্ষকে ঘায়েল করার কতগুলো ধাপ। একটা ধাপ পার হলে আরেক ধাপ। কোন ধাপ’ই নিরাপদ নয় শত্রুপক্ষের জন্যে। প্রথম ধাপ থেকে কেউ কেউ বেঁচে ফিরলেও দ্বিতীয় ধাপে সে ধরাশয়ী হবেই। তাও যদি না হয় তবে শেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকছে যেখানে শত্রুপক্ষ ধরাশায়ী।
তিনটা দুর্গ এখনো বেঁচে রয়েছে। ইদ্রাকপুর দুর্গ, সুবর্ণকান্দি দুর্গ (বর্তমান, সোনাকান্দা দুর্গ), খিজিরপুর দুর্গ (বর্তমান, হাজীগঞ্জ দুর্গ) তাই অনেকেই এই তিনটা দুর্গকে ঘিরেই ধাপগুলো নির্ধারণ করে থাকেন।
ঢাকাকে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করার নিমিত্তে সুবাদার মীর জুমলা টঙ্গী জামালপুরেও আরেকটি দুর্গ নির্মাণ করেন। যেটা উত্তরাঞ্চলের দিক থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো।
ট্রায়াঙ্গল ওয়াটার ফোর্ট
অনেক ব্যক্তিবর্গ সবকটা প্রাচীন জলদুর্গ সমূহৰ কথা স্বীকার করেন না। তারা তিনটা জলদুর্গ কে প্রাধান্য দেন। এই তিনটা দুর্গকে একত্রে “ট্রায়াঙ্গল ওয়াটার ফোর্ট” বা, “ত্রিভুজ জলদুর্গ” বলেন। এই তিনটি জলদুর্গের একটি হচ্ছে “হাজীগঞ্জ দুর্গ” বা, “খিজিরপুর দুর্গ” । অপর দুটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা জলদুর্গ ও মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর জলদুর্গ।
যদিও প্রাচীন রেনেল এর ম্যাপ বলছে অন্য কথা।
—চলবে (পরবর্তী পর্বের জন্য চোখ রাখুন আমাদের ওয়েব সাইট ও ফেসবুক পেজ এ)